এখন জনপদে
0

পুঁজি সংকট ও পারিবারিক সহযোগিতার অভাবে ঝরে পড়ছেন সিলেটের নারী উদ্যোক্তারা

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেটে প্রতিবছর প্রায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন কয়েকশ নারী উদ্যোক্তা। তবে বছর না ঘুরতেই ঝরে পড়েন তাদের অধিকাংশই। এতে খুব একটা বাড়ছে না নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা। এমনকি ব্যবসা সম্প্রসারণেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজি সংকট, পারিবারিক সহযোগিতার অভাবের পাশাপাশি অনুৎপাদনশীল খাতে প্রবাসী বিনিয়োগ বেড়েছে। শিল্প খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রবাসী বিনিয়োগ না আসাকে দুষছেন তারা।

সুরমা নদীর তীর ঘেঁষা সিলেট নগরীর কুশিঘাট এলাকার নারী উদ্যোক্তা রুপছানা বেগম। ১৯ বছর আগে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন কাপড় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ। স্বল্প পুঁজিতে ছোট দোকান ভাড়া নিয়ে কয়েকটি সেলাই মেশিন কিনে শুরু করেন ব্যবসা।

নিজের দাঁড় করানো ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন ছিল আকাশছোয়ার, শুরুটাও হয়েছিল দারুণভাবে। কিন্তু সময়ের সাথে অর্থ সংকট ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বেড়েছে দুশ্চিন্তা।

রুপছানা বেগম বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমাদের ব্যবসাটা ছেড়ে দিতে হবে।’

শুধু রুপছানা নন বরং জেলার অসংখ্য নারী উদ্যোক্তারই একই গল্প। নিজেদের ব্যবসা শুরুর পর স্বপ্নের ডালপালা মেলার আগেই নাম লিখাতে হচ্ছে ঝরে পড়াদের দলে। পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা এবং আর্থিক সংকটসহ নানা কারণেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না তারা।

আরেকজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘বেচা কেনায় লস হওয়ায় আমি আর কাপড় আনতে পারিনি। তাই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’

আলো আঁধারের খেলায়, শুধু ব্যর্থতাই নয় বরং অনেক নারী উদ্যোক্তারা নিজের কঠোর পরিশ্রমের আর দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে বদলাচ্ছেন নিজেদের ভাগ্য। গড়ে তুলছেন সফল শিল্প প্রতিষ্ঠান।

সিলেট শহরের খাদিমপাড়ার নারী উদ্যোক্তা সুইটি সূত্রধর। মাত্র ১৫০ টাকা নিয়ে শুরু করে বর্তমানে গড়ে তুলেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকার প্রতিষ্ঠান। যেখানে বাঁশ-বেতের আকর্ষণীয় শোরুমের পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির একটি কারখানা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২০ জন মানুষের। এই সফল নারী উদ্যোক্তা বলছেন নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এখন অনেকটাই সফল তিনি।

নারী উদ্যোক্তা সুইটি সূত্রধর বলেন, ‘নেট থেকে কেউ ডিজাইন বের করে দিয়েছে সেটা পারবো কিনা। এভাবেই দুই বছর ধরে ব্যবসা চলছে। কিন্তু কাস্টমারের চাহিদা অনেক। কিন্তু উৎপাদন করে কাভার দিতে পারছি না।’

নারীদের ব্যর্থতার বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক সংকটসহ পারিবারিকভাবে সহযোগিতা না পাওয়া এবং এরকম শিল্পখাতে প্রবাসী বিনিয়োগ না পাওয়া ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ প্রদানের দাবি জানান তারা।

সিলেট বিসিক উপ মহাব্যবস্থাপক মো. সুহেল হাওলাদার বলেন, ‘অনেকেই বিভিন্ন কারণে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছে। আমি মনে করি এখানে বাধা হচ্ছে সকলের সহযোগিতা।’

বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় মূলধন পেলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নারীরা ভূমিকা রাখতে পারবে-মনে করছেন নারী উদ্যোক্তারা।

ইএ