অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি সময় নিলেও সাত বছরের মধ্যে দেশে মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আর এই সময়কে হার মানিয়েছে ব্যয়বহুল বিআরটি প্রকল্প। যা ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া বিআরটি প্রকল্প যেন এখনও ঝুলছে আশার পেন্ডুলামে।
গাজীপুর চৌরাস্তার সকাল শুরু হয় যানজটে। গেল ৭ বছর ধরে সাড়ে ২০ কিলোমিটারজুড়ে বিআরটির ধীরগতির কাজ এ এলাকার মানুষ প্রতিদিন একই ভোগান্তিতে ভুগছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, আর যানজট যেন স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পথচারীদের একজন বলেন, ‘১০ বছর আগে এই জায়গায় যেমন ছিল ঠিক একইরকম আছে এখনো। কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং আরো বাড়ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘বছরের পর বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। একমাত্র তারাই জানে কবে ছাড়বে।’
অথচ প্রকল্পের প্রস্তাবে বিআরটি নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিল আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার। অত্যাধুনিক রাস্তা, পরিবহন আর নাগরিক সুবিধা যেন কেবল বিবরণীতেই সীমাবদ্ধ। ১৭০টি শহরের আছে বিআরটি প্রকল্প। তাদের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই বছর। তবে কেন আমরা এ প্রকল্প ৭ বছরেও শেষ করতে পারছি না?
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘এই প্রকল্প যাদের দেয়া হয়েছিল তারা অবকাঠামো বানাতে পারদর্শী। এক্সপ্রেসওয়ে একটা অবকাঠামো। আর বিআরটি, এমারটি এইটা হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থাপনা। আমি এইটা জানি না কিন্তু না জানা কখনো না করেনি কারণ প্রজেক্ট দরকার।’
বলা হচ্ছে কাজ বাকি ২ শতাংশ। কিন্তু দেখতে গিয়ে বোঝা গেল এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।
৯৮ শতাংশ শেষ বললেও হয়নি ৮ টি ফ্লাইওভারে মধ্যে ১টির কাজ। পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি একটি স্টেশনও। কাজ বাকি ডিভাইডার বসানো, ১০টি ফুট ওভার ব্রিজের। তবু কাগজে কলমেই এগিয়ে গেছে কাজ৷
ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কাজ শেষ হয়ে যাবে। না হওয়ার কারণ নেই। দুইটা একটা স্টেশনের কাজে ত্রুটি আছে সেগুলো দ্রুত হয়ে যাবে।’
২০১২ সালে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। সময় নির্ধারণ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর। সেটিও হয়নি। সবশেষ বলা হয়েছিল, চলতি বছরের আগস্টে কাজ শেষ হবে। এবার পুরো কাজ শেষ হবার কথা জানালেন আগামী বছরের জুনে।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের চাপে ১৬ ডিসেম্বরে বিআরটি প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে দায় সারার চেষ্টা। সে অনুষ্ঠানেই বোঝা গেল সিনিয়র সচিবও জানেন না অনেক তথ্য। পাশ থেকে সবকিছুই বলে দিচ্ছেন বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেন, ‘সহজে কম সময়ে যেন চলাচল করতে পারে। ১০-১৫ টা দিবো। যদি চাহিদা বাড়ে আমরাও বাসের সংখ্যা বাড়াবো। বাসগুলো গুলিস্থান পর্যন্ত যাবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনগণের নয় নিজেদের স্বার্থ হাসিলের এই প্রকল্প গাজিপুর এর গলার কাটা হয়ে থাকবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, পারি না সেটা মুখে বলা ভালো সৎ সাহস নিয়ে। জোড়া তালি দিয়ে যদি আবার ব্যাক করতে হয় এইটা আগের সরকারের সময় কেউ লজ্জা পেত না কিন্তু এই সরকারে প্রশ্ন তুলবে যে কেউ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রকল্প আরও দীর্ঘায়িত হবে এবং নতুন সমস্যার জন্ম দেবে। সমস্যা সমাধানে এ প্রকল্পে মেয়াদ আরো বাড়তে পারে বলে জানান তারা।