ছয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ বছরেও শেষ হয়নি বিআরটি প্রকল্পের কাজ

দেশে এখন
অর্থনীতি
0

ছয় দফা মেয়াদ বাড়িয়ে দীর্ঘ এক যুগেও শেষ হয়নি বিআরটি প্রকল্পের কাজ। সবশেষ নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ধীরগতির এ প্রকল্প। এরই মধ্যে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই খুলে দেয়া হয়েছে প্রকল্পের একাংশ। ফলাফল হিসেবে পুরনো যানজট ফিরে এসেছে নতুন রূপে। যার প্রভাব পড়বে ঈদযাত্রায়।

যানজটে স্থবির গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। চান্দনা চৌরাস্তা, সাইনবোর্ড, টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকায় সারিবদ্ধ যানবাহনের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। অথচ ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়ে নিরাপদ যাত্রার জন্য নেয়া হয় দেশের প্রথম বিআরটি প্রকল্প।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত সাড়ে বিশ কিলোমিটার সড়কে বিরতিহীন বাস চলাচলে ২০১২ সালে নেয়া হয় বিআরটি প্রকল্প।

তবে কাজ শুরু হতেই লেগে যায় পাঁচ বছর। ২০১৭ সালের এপ্রিলে নির্মাণকাজ শুরু হলেও গত আট বছরে একাধিকবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি এই প্রকল্পের কাজ। সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদিত মেয়াদকাল শেষ হওয়ায় বন্ধ রয়েছে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এ প্রকল্পের সব ধরনের নির্মাণ কাজ। ফলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসেও গতি পায়নি কচ্ছপগতির প্রকল্পটি। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী উড়াল সড়ক দৃশ্যমান হলেও বেশ কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনও চালু হয়নি। শেষ হয়নি ২৫টি বাস স্টেশন ও স্টেশন সংলগ্ন পথচারী সেতু নির্মাণের কাজও। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বিআরটি লেনে চলছে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই দায় সারছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অটোরিকশা দাপটে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

চালকদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমরা প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা করে জ্যাম ঠেলি এই জায়গায়। এখানে ঢুকলেই আমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়।'

ধীরগতিতে কাজের জন্য ঠিকাদারদের গাফিলতিকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, শহরের বুক চিরে চলা এ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় নগর পরিকল্পনায়ও ঘটছে ব্যাঘাত।

গাজীপুর জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, 'বিআরটির যারা দায়িত্বে ছিলেন, কাজ করছিলেন। তারা কোনো নিয়মের তোয়াক্কাই করেনি। একেবারে তাদের যেভাবে খুশি সেভাবে তারা মহাসড়কের ভেতর কাজ করেছেন। এবং সেই সমন্বয়হীনতা কিন্তু এখনও দেখতে পাচ্ছি। পরিকল্পনার সময় এখানে যেভাবে ভিজিবিলিটি পরীক্ষা করার দরকার ছিল প্রথমেই সেটা করা হয়নি।'

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ কামরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, 'যেহেতু বিকল্প রাস্তা নির্মিত হয়নি। এটাকে আমরা মাল্টিগ্রেড করেছি এবং এখানে এ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের নগর পরিকল্পনা ত্বরান্বিত হবে।'

এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ প্রকল্প পরিচালক। দুষলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। সপ্তম দফায় মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জানান তিনি।

বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, 'মেয়াদ না থাকার কারণে আমরা ঠিকাদারকে কোনো পেমেন্ট দিতে পারছি না। এখন ঠিকাদার যে নগদ নিজের টাকা ব্যয় করে কাজটা শেষ করে দিবে এই সামর্থ্য তার নেই। টাকার জোগান না পাওয়ার কারণে কাজের গতিটা ধীরগতির হয়ে গেছে।'

তবে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে বিআরটি করিডোরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন বিআরটি'র মহাব্যবস্থাপক।

ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, 'ঈদযাত্রায় যে আলাদা একটা লোড তৈরি হয় এটাকে এলিভেট করার জন্য দুইটা লেন একদিকে ব্যবহার করবো।'

ট্রাফিক পুলিশের তথ্য মতে, স্বাভাবিক সময়ে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে পঞ্চাশ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের সময় সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে না পারলে হতে পারে ভোগান্তি।

এসএস