মধুমতি, ধানসিঁড়ি বিধৌত বাংলার সৌন্দর্যের অহং। মেঘ-রোদ্দুরের সুখ, অবারিত সবুজের প্রান্তর জুড়ে সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যার পরতে পরতে মুগ্ধতা। এ অপ্সরার কাছে অজান্তেই বারবার ফিরে আসা। মনের অসুখ সারানোর এ রহস্যের মাঝেই আবৃত দেশের পর্যটন খাত।
সময়ের সঙ্গে দেশের পর্যটন খাত বিস্তৃত হয়েছে ঠিকই, তবুও ভ্রমণের অংকে আছে অপ্রাপ্তির হিসাবও। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, ভিসা জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছে এ খাত। আছে জনবল সংকটও। এমন বাস্তবতায় কমেছে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য বলছে, দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান মাত্র তিন শতাংশের কিছু বেশি। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্যানুযায়ী, গেল এক বছরে বিদেশি পর্যটকদের থেকে আয় কমেছে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১৫৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩ সালে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ৪৪ কোটি ডলারে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচারণার অভাব, মাঠ পর্যায়ে দক্ষ ট্যুরিস্ট গাইড না থাকায় একদিকে যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন:
মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের পর্যটন সেবা সংস্থা সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাস সুমন বলেন, ‘আমাদের যে গেস্ট হাউজ সেখানে প্রতি সপ্তাহে আমরা ১০ থেকে ১২ জন বিদেশি পর্যটক পেতাম। গত এক মাসের ভেতরে আমরা একজন বিদেশি পর্যটকও পাইনি।’
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের দাবি, টেকসই মাস্টারপ্ল্যানের অভাবে পিছিয়ে দেশের পর্যটন খাত। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই খাতে দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নের তাগিদ তাদের।
পর্যটন বিচিত্রা সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, ‘হাওর অঞ্চল, সাজেক বা নিঝুম দ্বীপ- সে জায়গাগুলোর স্থানীয় মানুষের অর্থনীতিকে যদি মুক্তি দিতে হয় তাহলে একমাত্র ইন্ডাস্ট্রি হলো পর্যটন শিল্প।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, সম্মিলিত উদ্যোগের অভাবে বিকাশ ঘটছে না পর্যটনে। সংকট থেকে উত্তরণে পর্যটনবান্ধব নীতিমালা তৈরিসহ সরকারি সহায়তার দাবি তার।
টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘পরিকল্পনা মাফিক যদি আমরা পর্যটন স্পটগুলো, পর্যটন প্রোডাক্টগুলো যদি আমরা দৃষ্টিপাত দেই তাহলে ট্যুরিজম সাস্টেইন করবে। এটা শুধু সরকার বা শুধু প্রাইভেট স্টেক হোল্ডার বা কোনো ট্যুর অপারেটর বা অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের একার পক্ষে সম্ভব না, আমার দেশের জনগণ যদি সচেতন না হয়।’
আরও পড়ুন:
ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-২০২৪'র পরিসংখ্যান বলছে, এ খাতে ১১৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার তলানিতে।
এমন প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে পড়া পর্যটনকে এগিয়ে নিতে কী উদ্যোগ পর্যটন করপোরেশনের?
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের টার্গেট অন্ততপক্ষে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। ১০ শতাংশ না পারলেও অন্ততপক্ষে ছয় বা সাত শতাংশ হলে আমাদের ট্যুরিজমের সাইজ বড় হবে। এটা প্রোপার প্ল্যানিং, মার্কেটিং এর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও নানা সংকটে ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশের পর্যটন খাত। এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটনে গতি আনতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তবে আদোতে কতটা পরিকল্পিতভাবে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে দেশের পর্যটন খাত?




