২০০৯ সালে নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এর দু'বছর পর প্রথমে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। মেয়াদ ছিল সাড়ে তিন বছর। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাঝে মালিকানা দ্বন্দ্বের জেরে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এ নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে অচলবস্থায় প্রকল্পটি। পরবর্তীতে নকশায় কিছু পরিবর্তন এবং ২৩৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চুক্তি সংশোধন করা হয়।
আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানীর যানজট নিরসন। আর ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এবং পরে ২০ মার্চ কারওয়ান বাজার পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়।
জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর কাজ বন্ধ থাকলেও গেল নভেম্বরে ফের শুরু হয় কাজ। তবে সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাজের গতি খুব কম। পূর্বে তৈরি করা পিলারগুলোর শেষদিকের কাজেই ব্যস্ত শ্রমিকেরা। বলছেন, আগে এই প্রকল্পে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তবে উপরের নির্দেশে বর্তমানে কাজ করছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ জন।
শ্রমিকদের মধ্যে একজন বলেন, 'কোম্পানি দুই দিন খোলে আবার ছয়মাস বন্ধ থাকে। গত রোজার ঈদের আগে বন্ধ দিয়েছে, তারপর আট মাস পর আসলাম। এসে দুইমাস হচ্ছে কাজ করছি এখন তো লোকই নাই, ২০ থেকে ২৫ জন আছি। আগে ছয় থেকে সাত হাজার লোক ছিল।'
এছাড়াও বাজেট স্বল্পতার কারণেও প্রতিনিয়তই কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে বলেও জানান শ্রমিকরা।
অন্য একজন বলেন, 'প্রতিবছর বাজেট পাশ হয়, তারপর আমাদের কাজের সমন্বয় করা হয়। যতটুকু বাজেট পাশ হয় সে অনুযায়ীই কাজ শুরু হয়। কাজটা রানিং ছিল কিন্তু ইদানিং লোক কমিয়ে দিয়েছে।'
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দক্ষতার পরিচয় না দিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেমন বাড়বে দেনা ঠিক তেমনি বাড়বে দায়ও। এছাড়াও এই মেগা প্রকল্পের সাথে জড়িত আছে আরও দু'টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যা শুরু হবে চিটাগাং হাইওয়ে থেকে আর শেষ হবে ঢাকা ইপিজেড এ।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, 'দুইটা বড় প্রজেক্ট মানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফেল হওয়া মানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফেল হওয়া। এবং এতবড় বিনিয়োগ করে এটার ইউটিলিটি পাওয়া যাবে না। এখানে কিন্তু সরকারকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিনিয়োগকারীদের সাথে বসতে হবে। এবং সেটার জন্য যদি আমরা না করি তাহলে এটার দায় দেনা কিন্তু যে পরিমাণ হবে, দায় দিবো দেনা দিবো কিন্তু উপযোগিতা পাবো না। তাহলে আম-ছালা সবই গেলো।'
২০২৬ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, আরও একবছর সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে বাড়েনি খরচ। আর দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজের অগ্রগতি চোখে পরবে বলেও আশ্বাস সেতু মন্ত্রণালয়ের।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, 'এক বছর কিন্তু আমরা বাড়িয়েছি কিন্তু ব্যয়বৃদ্ধি না করে। আমাদের ব্যয় বাড়বে না, শুকু সময়টা আমরা বাড়িয়েছি বর্তমান ব্যবস্থা বিবেচনা করে যেহেতু মাঝখানে অনিবার্য কারণবশত এটা বন্ধ ছিল। এখন কিন্তু গতি আসছে। এবং গতকালই আমরা সেই অনুমোদন পেয়েছি এখন দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আমরা আশা করছি।'
কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে প্রকল্পটি। বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজারের বেশি যানবাহন এই সড়কটি ব্যবহার করছে।