১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ও প্রতিশ্রুত সংস্কার নিয়ে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানা গেলেও দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের যে দাবি জানিয়ে আসছিল- তা আরো জোড়ালো হয় বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দলের মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি আশা করেছিল আরও যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের সময় জানানো হবে- কিন্তু এনিয়ে অস্পষ্টতার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা রোডম্যাপ দেবেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। এটা আমাদের হতাশ করেছে।’
তিনি বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে প্রেস সেক্রেটারি ও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য পরস্পর বিরোধী যা জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবে।'
আর বিএনপির সাবেক জোট সঙ্গী জামায়াত বলছে, জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেলেও নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে না। এ বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য- নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাড়াহুড়ো সেই একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘অতীতের মতো আরেকটি নির্বাচন হয় মৌলিক কোনো সংস্কার ছাড়া তাহলে নির্বাচনের গুণগত পরির্বতন হবে না।’
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সাথে দ্বিমত দেখা গেল জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা পালন করা তরুণ ছাত্রনেতাদের কণ্ঠেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে নির্বাচনের আগে সংবিধান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারেই জোর দিতে দেখা গেলো।
আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংস্কার একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। আমরা চাচ্ছি আগে সংস্কার হবে তারপর নির্বাচন হোক।’
দীর্ঘদিন রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর একাধিক নেতার কণ্ঠেও শোনা গেল- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনপূর্ব আমূল সংস্কারে জোর দিতে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘একবার সরকারে গেলে অনেকসময় দেখা যায় স্বেচ্ছাচারিতা আসতে পারে। সংস্কার করে নির্বাচন করলে ভালো হবে।’
নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতভেদ- সেখানে দ্রুত সংস্কার শেষে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিলে এর অবসান হবে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। পাশাপাশি সংবিধান, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারবিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করলে আবারও ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম হতে পারে দেশে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘এখন যেহেতু রোড ম্যাপ নেই তাই অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে। জনগণও আশঙ্কা করছে সংস্কার করে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সবাই মনে করছে বিএনপি জিতবে। ’
প্রত্যাশিত সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে বলে মত রাজনীতিবীদদের।