অর্থনীতি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

অস্তিত্ব সংকটে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টি কোম্পানি, হুমকিতে চা শিল্প

প্রতিদিন ক্ষতি ৩ কোটি টাকার বেশি

মৌলভীবাজার

আর্থিক সংকটে অস্তিত্ব সংকটে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টি কোম্পানি। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ৩ কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বেকার হয়ে পড়া কয়েক হাজার শ্রমিক। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে চা শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রামলাল, মৌলভীবাজারের ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের পাত্রখলা বাগানের একজন শ্রমিক। বর্তমানে চা তোলার কাজ না থাকায় করছেন নিজের চালাহীন ভাঙা ঘরের মেরামত।

কেমন আছেন জিজ্ঞেস করায় জানালেন, আহারের ব্যবস্থা নেই, পকেটে টাকা নেই। তাই পক্ষকালের বেশি সময় খেয়ে না খেয়ে শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। ভাগ্যদাতাও নাকি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তার থেকে।

রামলালের মতো একই অবস্থা ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২টি বাগানের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকের। শুধু যে মজুরি সংকট নয়, গেল এক বছরের বেশি সময় রেশন, বোনাসসহ প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও মিলছে না নিয়মিত। ফলে চা শ্রমিকের পরিবারের লাখ মানুষ দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়।

এদিকে বাগানে কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মানববন্ধন, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচি চালিয়েও ফলাফল শূন্য হওয়ায় কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা চাচ্ছি দ্রুতগতিতে আমাদের মজুরি, বোনাস যা আছে দ্রুত ক্লিয়ার করে দেয়। আমাদের রেশনটা দেয়া হোক। ১৮ মাস ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে টাকা জমেছে সেটা শ্রমিকদের দেয়া হোক।’

পাত্রখোলা চা বাগান ‍পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন। আজকে বাগান বন্ধের ১৪ দিন হওয়া সত্ত্বেও মালিকপক্ষ কোনো ধরণের সদুত্তর দিচ্ছেন না। যার কারণে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।’

ন্যাশনাল টি কোম্পানির বাগানগুলো বন্ধ থাকায় জাতীয়ভাবে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি চায়ের বাজারে নানামুখী সংকটের শঙ্কাও করছেন তারা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট চা উৎপাদনের ৯ শতাংশ এনটিসির নিয়ন্ত্রণে। এটা কিন্তু খুব কমও না। বর্তমানে কোনো প্রভাব না পড়লেও শিগগিরই দেশের চা বাজারে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে। আমাদের চায়ের বাজার হয়তো অস্থিতিশীল হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, বাগান মালিক থেকে শুরু করে, সরকার, চা-বোর্ড, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একত্রিত হয়ে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যে কী কারণ, কেন এটা বন্ধ হলো। সে জায়গায় মনে হয় নজর দেয়া দরকার।’

এমন অবস্থায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি উৎপাদন মৌসুমে ব্যাপক হারে চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে জানায় বাগান কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল টি কোম্পানির সবগুলো বাগান বন্ধ থাকার কারণে একদিকে যেমন শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে জাতীয়ভাবে চায়ের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন যদি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান না করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরো বড় সংকট তৈরি হবে বাংলাদেশের চা শিল্পে।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর