ঘটনার সূত্রপাত একটি ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে..... গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৪০ মিনিটে খাগড়াছড়ি সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ড এ খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী অংম্রাচিং মারমা নামে এক উপজাতি মেয়েকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ভিকটিমের পিতা খাগড়াছড়ি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ওই ব্যক্তির জিজ্ঞাসাবাদ চলমান আছে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজনকে আইনের আওতায় আনা হলেও ধর্ষণের ঘটনায় শুরু থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ি সদরস্থ শাপলা চত্বরে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন রাঙামাটিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা আয়োজিত হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ সমর্থিত উপজাতি ছাত্র-জনতার ব্যানারে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়। এদিন ইউপিডিএফ সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খাগড়াছড়িগামী ৪টি বাসের পথরোধ করে গ্লাস ভাঙচুর করে ও গাছ ফেলে রাস্তা বন্ধ করে আটকে রাখে।
এছাড়া তারা একটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাশাপাশি খাগড়াছড়ি সদর, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড় ও দিঘিনালা উপজেলায় ইউপিডিএফ সমর্থিত উপজাতি নেতাকর্মী গাছের গুড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২৬ সেপ্টেম্বর সকালে ইউপিডিএফ সমর্থিত জুম্ম ছাত্র জনতার উদ্যোগে ধর্ষণ বিরোধী মহাসমাবেশ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ১২০০/১৩০০ লোকজন জড়ো হয়। এদিন সকাল ১১টার পর সমাবেশ শুরু হলে আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় সমাবেশের পাশ দিয়ে গমনকৃত সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির উপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে আক্রমণ করে। এসময় সেনাবাহিনীর একটা পিকআপ গাড়ি ভাংচুর করা হয় ও ৪ জন সেনাসদস্য আহত হয়।
সম্পূর্ণ ঘটনাকালীন সময়ে প্রথম থেকেই সরকার, সেনাবাহিনী ও পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দেয়। ঘটনার অল্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও, ইউপিডিএফ পরিস্থিতি অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করে। সকল বাহিনী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিবাদ বা কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করে নাই।
কিন্তু, বারংবার বিভিন্ন অজুহাতে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার প্রয়াস দেখা গিয়েছে। এছাড়াও, কোন কারণ ব্যতীত সেনাবাহিনীর গাড়ির উপর আক্রমণ ও সেনাসদস্যদের আহত করা হয়েছে। চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনী কোনো বল প্রয়োগ না করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ইউপিডিএফের দায়িত্বশীল বিভিন্ন নেতা টেলিফোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকেই ইউপিডিএফের সমর্থনে খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালিত হয়। এসময় সাজেকে হাজার খানেক পর্যটক আটকা পরেন, যাদের সেনাবাহিনী সহায়তা করে গন্তব্যে নিয়ে যায়। সকাল থেকেই জেলার খাগড়াছড়ি সদর, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড় ও দিঘিনালা উপজেলায় ইউপিডিএফ সমর্থিত উপজাতি নেতাকর্মী গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে জনজীবনে অশান্তি নেমে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল ও হাসপাতালের রোগীদের জীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। একই ধরনের ঘটনা রাঙামাটিতেও ঘটে।
পরবর্তীতে দুপুর ১টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সামনের দোকানে বাঙালিদের দেখে ইউপিডিএফ (প্রসীত) সমর্থিত সংগঠনের অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনার আকস্মিকতায় বাঙালিরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
পরবর্তীতে বাঙালি ৬০/৭০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে উপজাতি সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে উপজাতি সন্ত্রাসীরা নারানখিয়া এলাকায় অবস্থান নেয় এবং পরপর ৮/১০টি ককটেল বিস্ফোরণ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ি-বাঙালিদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলমান ছিল। এর মধ্যে দুপুর ২টায় জেলা প্রশাসক ১৪৪ ধারা জারি করলেও উভয় পক্ষ এটা প্রতিপালন হতে বিরত থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সহায়তায় সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ইউপিডিএফের (প্রসিত) প্ররোচনায় তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন বিশেষ করে পিসিপি কর্তৃক সম্পূর্ণ উস্কানিমূলকভাবে দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ঘটনা ব্যতীত ইতোপূর্বেও একই ধরনের ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা দেখা গেছে। সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ইউপিডিএফের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টির একটি অপপ্রয়াস হতে পারে।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশ সবার। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। আবহমানকালের সংস্কৃতিও তাই বলে। আমরা সেই ঐতিহ্যকে হারাতে চাই না। চাই না ধর্ম ও সম্প্রদায় নিয়ে হোক কলহ। আমাদের চেতনা হোক-মানবতার, মানবিকতার ও সর্বজনীনতার। আমাদের ধরণিতল হোক কলঙ্কশূন্য। বাংলাদেশ নবচেতনায় জাগ্রত হোক।




