ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সামনের সারিতে বাংলাদেশ, মুহূর্তেই ধসে যেতে পারে রাজধানীর বহু ভবন

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সামনের সারিতে বাংলাদেশ, ধসবে রাজধানীর বহু ভবন | এখন টিভি
0

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে, রাজধানীতে কখনও সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৪০ শতাংশ ভবন ধসে যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনের নির্মাণ বিধি না মানা ও ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় বড় ধরনের ঝুঁকির শঙ্কায় রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর বাসিন্দারা। তবে ঝুঁকি এড়াতে শিগগিরই ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় হাতে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তারা।

ভূমিকম্পের ভয়াবহ দৃশ্য পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ৭.৭ মাত্রার কম্পনে গেল ২৮ মার্চ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশটির বড় বড় অসংখ্য ভবন। নিহতের সংখ্যা ছাড়ায় তিন হাজারের বেশি।

মিয়ানমারের সেদিনের ভূমিকম্পের আঁচ লেগেছিল বাংলাদেশেও। এর আগেও দেশে গেল কয়েক বছরে অনুভূত হয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য ভূ-কম্পন। এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বড় ভূমিকম্পের।

সীমান্তে তিনটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট নিয়ে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ইন্ডিয়ান বা ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। এই অবস্থানের সাথে ১০০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে দেশের উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, 'সিলেটের ওখানে একটা সম্ভাবনা আছে। এখানে যেহেতু ডাউকি ফল্ট আছে। তো ওই ফল্ট লাইনগুলোতে হলেই শহরে চলে আসবে। অবশ্যই আমাদের ভূমিকম্প ঝুঁকি আছে। টেকটোনিক বাউন্ডারির খুব কাছে আছি আমরা, সেজন্য এখানে সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

গবেষণা বলছে, ডাউকি ফল্টের প্রভাবে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় রয়েছে সিলেট, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা। এর মধ্যে মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা ঢাকা শহরের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক ফাটল হিসেবে ধরা হচ্ছে মধুপুর। ১১৮ কিলোমিটার এই ফাটল সর্বোচ্চ ৭.৯ মাত্রার ভূকম্পন সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।

নগরবিদরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে তো বটেই, অপরিকল্পিত নগরায়নও ভূমিকম্পে ভীতির অন্যতম কারণ। তাদের অভিযোগ, খাল বা জলাশয় ভরাট করে বিল্ডিং কোড না মেনেই রাজধানীতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন।

নগরবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'ভলনাবিলিটি তখনই তৈরি হয় যখন অনিরাপদ ভবন বানানো হয়। এবং কোনো ধরনের সেফটির বিষয় থাকে না। সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনার ব্যর্থতা। এবং বিল্ডিংয়ের কোড না মানার কারণেই কিন্তু আমাদের বড় শহরগুলোতে একটা বড় ঝুঁকি আছে। রাজউকের নাকের ডগায় এগুলো হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেখেও না দেখার ভান করেছে। ভূমিকম্প হলে কিন্তু সে প্ল্যানও মানবে না, কোড মেনেছে কি না সেটাও শুনবে না।'

এদিকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার পরিসংখ্যান বলছে, গেল দেড়শ' বছরে বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে আট মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এমনটা ফের ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশের প্রায় ছয় কোটি মানুষ। ঝুঁকিতে আছে পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি থেকে সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, 'সরকারের অ্যাওয়ারনেস বিল্ডআপ প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস আদালতে প্রোগাম করতে হবে। ওভারকাম করতে হবে যে আমি কীভাবে এটা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। বা আমি ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আসতে পারি। এই নলেজটা যদি আমার থাকে এবং আমার সাধারণ জনগণের মধ্যে যদি এটা জানাতে পারি তাহলে অনেকাংশে আমরা সেফ হতে পারি।'

ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে ঢাকার বিল্ডিং কোড আইনকে শক্তিশালী করাসহ দুর্যোগ মোকাবিলা ও সম্পদ রক্ষায় সরকারের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার ওপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।

এসএস