টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্যের খোঁজ নিতে মাঠে নামে এখন টেলিভিশন। সরেজমিনে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের ফটকের সামনে পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানদার ও আশপাশের কম্পিউটারের দোকানিরা পাসপোর্ট গ্রাহকদের নানাভাবে বোঝাচ্ছেন তাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে নেয়ার জন্য।
পাসপোর্ট অফিসের দেয়ালে সাটানো 'পাসপোর্ট তৈরির জন্য দালালের শরণাপন্ন হবেন না' অথচ প্রকাশ্যে কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ও ফটকের সামনের মাঠে বেশ কিছু দালাল ঘুরা বেড়াচ্ছে। এখন টেলিভিশনের রিপোর্টার পাসপোর্ট অফিসের সামনে যেতে দালালরা কৌশলে কাছে টানে। তারা জানান, চ্যানেল ফি ছাড়া ফরম জমা দিলে নানা হয়রানির শিকার হবে। ১০ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার নিয়মিত পাসপোর্টের জন্য ব্যাংক ড্রাফট পাঁচ হাজার ৭৫০ ও জরুরি পাসপোর্টের জন্য আট হাজার ৫০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট থাকলেও ভোগান্তি লাঘবে তাদের মাধ্যমে ঘুষ হিসেবে দিতে হয় অতিরিক্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। ঘুষ না দিলেই হয়রানি করে কর্মচারীরা। এখন টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখে পরবর্তীতে সটকে পরে সব দালাল।
একজন দালাল বলেন, 'আবেদনের ওখানে ২০০ টাকা খরচ আছে, অফিস খরচ আছে। আপনাকে আমরা লাইনে দিবো না। লাইন, সিরিয়াল ছাড়াই আপনাকে পাশ করিয়ে সরাসরি ফিঙ্গার করিয়ে দিবো।'
আবেদনকারীরা বলছেন, দালালরা অফিসের কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ করে ভোগান্তি ছাড়া দ্রুত কাজ করে দেয়। দালালের কাছে গেলে ঘুষের টাকার বাইরে কোনো কাগজপত্রই লাগে না। আর দালাল না ধরলে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
একজন আবেদনকারী বলেন, 'দালাল আছে, তারা আগে থেকেই টাকা পয়সা দেয়। দেওয়ার পর ওদের কাগজপত্র কোনোকিছু লাগে না। আর যারা নিজের থেকে করে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, এনআইডি ভেরিফাই করে। মানে একটার পর একটা হয়রানি করবেই।'
অন্য একজন আবেদনকারী বলেন, 'কাগজপত্র আমার সবকিছু ওকে। ব্যাংক ড্রাফট আমি নিজে করেছি। আসার পর আবার নতুন করে কয়েকটা কাগজ চাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে এসে দেওয়ার পর বলে কালকে আসো।'
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘব হবে বলে দাবি সুজনের এই কর্মকর্তার।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক তরুণ ইউসুফ বলেন, 'একজন মানুষ গেলে পাঁচজন এগিয়ে আসছে। কী চাই ভাই? কী করবেন? কী করবেন? বলে। তারা কেন থাকবে। পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তি থাকবে। তারা হয়তো সহযোগিতা করলো। কিন্তু সেই বিষয়টা দেখা যায় না। এই বিষয়টা দুঃখজনক।'
টাঙ্গাইলে মাসে ছয় হাজারের অধিক পাসপোর্টের আবেদন পড়লেও বেশিরভাগ গ্রাহকই দালালদের খপ্পরে পরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এদিকে দালালদের দৌরাত্ম্যে কথা শিকার করার পাশাপাশি নিজের ব্যর্থতার কথা শিকার করলেন পাসপোর্ট সহকারী পরিচালক। তবে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জেবুন্নাহার পারভীন বলেন, 'এর আগে এদেরকেই কিন্তু থানায় ধরে নিয়ে গেছিল। কিন্তু ধরে নিয়ে লাভ কী?'
বিভিন্ন সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দালালদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে দালালদের প্রশ্রয়দাতা পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা ও আনসার সদস্যরা।