স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

দুস্থ-অসহায় রোগীদের পাশে গরীব চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র

অনেকটা নিভৃতেই দুস্থ ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা করিয়ে আসছে গরীব চিকিৎসা সেবা নামে একটি সংগঠন। নীলফামারীর সৈয়দপুরের এই সংগঠনটি প্রায় নয় বছর ধরে হাজারের কাছাকাছি রোগীকে দিয়েছে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ওষুধ কিনে দেয়ার মতো সেবা। অস্থায়ীভাবে সেবা দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি রোগীকে। আর এর পেছনে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় কোটি টাকা।

সৈয়দপুরের অসহায় দুস্থ রোগীদের জন্য প্রায় নয় বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে গরীব চিকিৎসা সেবা নামে একটি সংগঠন।

২৬ বছর বয়সী সাবা দীর্ঘদিন ধরে খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত। পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে তার মা। তাই নিজের রোগের চিকিৎসা তার জন্য অকল্পনীয়ই ছিল। প্রায় চার বছর আগে সাবা খোঁজ পান গরিব চিকিৎসা সেবার। তখন থেকেই বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাচ্ছেন তিনি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন সুস্থ।

সাবার মা বলেন, 'আমার বড় মেয়ে খুব অসুস্থ। মনে করেন, রক্তশূন্যতা আবার ক্যান্সার। প্রথমে রংপুর পাঠিয়েছিল। কিন্তু এরপর এখানে চিকিৎসা করাচ্ছে। ওষুধ থেকে সব তারাই করছে।'

গত নয় বছরে সাবার মতো ৮৬৫ জন স্থায়ী রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়েছে এই সংগঠন থেকে। শুধু ডাক্তার দেখানো নয়, যেকোনো ধরনের পরীক্ষা, ওষুধসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয় সংগঠনটি। সাত থেকে আট বছর ধরে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়।

একজন রোগী বলেন, 'মানুষ বললো এখানে চিকিৎসা আছে, যান। তারপর এখানে আসলাম। এখানে চিকিৎসা করার সাত বছর হলো আমার।'

২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশ করে গরীব চিকিৎসা সেবা। মূলত দুস্থ ও অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়াতেই জন্ম এই সংগঠনের। স্থায়ী রোগীর পাশাপাশি প্রায় পাঁচ হাজার অস্থায়ী রোগীকে সেবা দিয়েছে সংগঠনটি।

গরীব চিকিৎসা সেবা সাধারণ সম্পাদক শাহ্জাদা আহমেদ বলেন, 'আমাদের এখানে পাঁচ থেকে ছয়টা রোগী আছে। যার মধ্যে তিনটা ক্যান্সারের রোগী ছিল। যাদের আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি। তাদের পেছনে আমাদের অনেক ব্যয়বহুল টাকা খরচ হয়েছে।'

গরীব চিকিৎসা সেবার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শুরু থেকেই আছেন এই অঞ্চলের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা. শেখ নজরুল ইসলাম। অসহায় এইসব রোগীদের সেবা দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে চান তিনি। ডা. নজরুলের মতো আরও চারজন ডাক্তার এই সংগঠনের সদস্য।

ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, 'ওষুধগুলো পেয়ে রোগী খুবই আনন্দিত হয়। খুবই খুশি হয়। আমাদের সবাইকে দোয়া দিয়ে যায়।'

গরীব চিকিৎসা সেবার প্রধান উপদেষ্টা ডা. শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, 'যখন আমার কাছে কোনো দরিদ্র মানুষ আসলো। আমি দেখলাম তার ভিজিট দেয়ার মতো ক্যাপাসিটি নেই, ওষুধ কেনার মতো ক্যাপাসিটি নেই। তখন তাকে আমি চিকিৎসা দিয়ে ওনাদের ঠিকানা এবং অফিসের ঠিকানা বলে দিই। তারা সেখানে গেলে পরিপূর্ণরূপে যাচাই করা সাপেক্ষে সহযোগিতা করে থাকেন।'

সদস্যদের চাঁদা, যাকাত, বিভিন্ন ধরনের অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলে সংগঠনের কার্যক্রম। যে কোনো ধরনের সমালোচনা এড়াতে নিশ্চিত করা হয় স্বচ্ছতা। রোগীদের সেবা দেয়ার আগে তাদের আর্থিক অবস্থাও যাচাই করা হয়।

গরীব চিকিৎসা সেবার সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমি অনেকসময় দেখি যে রোগীরা হতদরিদ্র যারা আছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। প্রেসক্রিপশন নিয়ে দোকানে দোকানে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সেসময় আমার মনে হয়েছিল যে তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা।'

নিরবে নিভৃতে কাজ করা গরীব চিকিৎসা সেবার প্রতিটি সদস্যের প্রত্যাশা, তাদের দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসবে হতদরিদ্র রোগীদের সহায়তায়।

এসএস