এক মাস আগেও যে শিশুটি জন্মগত বধিরতার কারণে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারতো না এখন তার ঠোঁটে আধো আধো বোল। শিশুটির নাম মুনতাহা। মায়ের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করছে সে।
অথচ জন্ম থেকেই সন্তানকে নিয়ে শঙ্কায় বাবা-মা। এ ঘাটের জল, ও ঘাটে গড়ালেও কাজ হয়নি তেমন। অবশেষে ১৮ মাস পর খোঁজ পান ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের সেবা নেয়া শুরু করেন তারা।
স্বল্পসময়ে মেয়ের সুস্থতা দেখতে পেয়ে বাবা-মায়ের ঠোটে খুশির ঝিলিক।
মুনতাহার মা বলেন, 'যে বাচ্চা এতদিন আমাকে মা ডাকতে পারেনি, সে বাচ্চা এখন আমাকে মা বলতে পারবে। আমার জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া।'
শুধু মুনতাহা একা নয়, জন্মগত বধিরতায় আক্রান্ত সিলেট বিভাগের আরও ৯৯ জন শিশু ফিরে পেয়েছে শ্রবণ ও বাক শক্তি। হাতের নাগালে এমন সেবায় খুশি সেবাগ্রহীতারা।
একজন শিশুর মা বলেন, 'এখন অপারেশন সাকসেস হইছে। এখন আমার বাচ্চা মেশিন লাগানোর পর আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছে। আমার বাচ্চা এখন কুরআন পড়বে, কথা বলবে। আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু চাওয়া নাই।'
২০২২ সালের ২৫ মে, ঢাকার পর সিলেটে সর্বপ্রথম ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি কার্যক্রম শুরু হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আর্থিক সহযোগিতায় সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ইএনটি বিভাগ এই কার্যক্রম শুরু করে। এরপর একে একে ১০০টি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসকরা জানালেন, এই সার্জারির মাধ্যমে জন্মবধির শিশুদের নিরাময়ে আপ্রাণ প্রচেষ্টার কথা।
সিওমেক ইএনটি ককলিয়ার ইমপ্লান্ট ও বিভাগীয় প্রধান প্রকল্প পরিচালক ডা. নূরুল হুদা নাঈম বলেন, 'যারা জন্মবধির শিশু, কানে শুনতে পায় না, তাদের এই যন্ত্রের মাধ্যমে আসলে আমরা শুনাই। এই যন্ত্রের দুইটা পার্ট থাকে, একটা ভেতরে, একটা বাইরে। ভেতরেরটা চামড়ার নিচে হাড়ের মধ্যে ওই যন্ত্রের মতো খাঁচ কেটে আমরা ভেতরে দিয়ে দিই এবং এটার মাধ্যমেই শব্দটা কানের ভেতরে গিয়ে ব্রেনকে উদ্দীপ্ত করে এবং সে শুনতে পারে।'
অডিওলোজিষ্ট ডা. রুবাইয়া বলেন, 'আমরা এখানে কিছু টেস্ট করি, টেস্টগুলো হচ্ছে এবিআর, এএসএসআর, ওই। এটা হচ্ছে একটা অবজেক্টিভ টেস্ট, যে টেস্টের মাধ্যমে আমরা ব্রেনের থেকে শব্দ সংগ্রহ করে এটা সিলেক্ট করি যে বাচ্চাটা কি আসলেই শুনতে পাচ্ছে না? না কি অন্য কোনো সমস্যার কারণে সে রেসপন্স করছে না।'
সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকায় নিম্নআয়ের মানুষ করাতে পারবেন আধুনিক প্রযুক্তির জটিল এই চিকিৎসা।
জন্মগত বধির ফুলের মতো নিস্পাপ এই শিশুরা একসময় মা কে মা এবং বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারতো না। তবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের ফলে তারা ফিরে পেয়েছে বলার এবং শোনার সক্ষমতা। অল্প খরচে দুর্লভ এই চিকিৎসা সেবা পেয়ে যেমন খুশি এই শিশুদের অভিভাবকরা তেমনি খুশি এখানকার সেবাদানকারী চিকিৎসক এবং নার্সসহ সবাই।