বিশেষ প্রতিবেদন
দেশে এখন
0

ঐতিহ্য এখন যন্ত্রণা; রাজধানীতে ১২ লাখের বেশি রিকশা

রিকশা ঢাকার ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক রিকশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। তথ্য বলছে, ঢাকায় বৈধ-অবৈধ মিলে রিকশার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। যার মধ্যে লাইসেন্সধারী দুই লাখ ১৪ হাজার প্রায়। ফলে বিপুল সংখ্যক অবৈধ রিকশা একদিকে যেমন শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে অন্যদিকে যান্ত্রিক রিকশার বেপরোয়া গতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা।

রিকশা-সিএনজি-বাইক চালক এসব চালকদের একটাই প্রশ্ন, লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে চলাচল করতে পারলে তারা কেনো লাইসেন্স ফি দিয়ে সড়কে চলাচল করবে?

একজন সিএনজি চালক বলেন, 'আমরা ঠিকমতো চালাতে পারি না। ওদের বাধা দিলে উল্টা আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করে। জায়গায় জায়গায় আন্দোলন করে। রা যদি ট্যাক্স না দিয়ে চলতে পারে তাহলে আমরাও ট্যাক্স দিবো না।'

৫ আগস্টের পর রাজধানীর প্রধান সড়কে অবাধে চলতে শুরু করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। যানজট, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে এসব রিকশা বন্ধে গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। তবে ব্যাটারি রিকশা চালকদের আন্দোলনের মুখে আদেশটি স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এরপর থেকে ব্যাটারি রিকশার দাপট আরও বেড়েছে।

একজন যাত্রী বলেন, 'অটো রিকশাটা বাচ্চারা চালায়। ওরা আবার অনেক বাজেভাবে চালায়। আবার অনেকে আছে যারা পায়ে রিকশা চালাচ্ছে, তাদের ওভারটেক করে চলে যায় একদম কাছে দিয়ে।'

একজন মাইক্রো ড্রাইভার বলেন, 'রাস্তার মাঝখান দিয়ে তারা (অটোরিক্সা) চালায়। হর্ন দিলেও তারা সাইড দিতে চায় না। উল্টাপাল্টা চালিয়ে একটা আরেকটা গাড়ির উপর পড়ে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যায়।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল ১১ লাখ। তবে অনেকের মতে, পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখের ওপরে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তথ্যমতে, নিবন্ধিত রিকশা মাত্র এক লাখ ৮২ হাজার ৬৩০টি। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) এই সংখ্যা মোটে ৩১ হাজার। নিবন্ধিত দুই লাখ ১৩ হাজার রিকশার সবই প্যাডেলচালিত রিকশা। এর বাইরে রাজধানীতে সব রিকশাই অনিবন্ধিত।

ঢাকায় রিকশার নিবন্ধন দেয় দুই সিটি করপোরেশন। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল অনিবন্ধিত রিকশা কীভাবে সড়কে চলছে? উত্তরে ডিএনসিসি ব্যাটারিচালিত রিকশার দায় চাপাল অন্য সংস্থার ওপর। আর ডিএসসিসি বলেছে, অভিযান পরিচালনার কথা।

ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, 'ইজিবাইক আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সরকার যদি বলে যে ই ইজিবাইক সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ম্যান্ডেট, তখন আমরা টেক কেয়ার করবো।'

ডিএসসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'অনিবন্ধিত, সেটি যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যা কিছুই হোক না কেন মরা চাই যারা আমাদের রেজিস্ট্রেশনের বাইরে থাকবে, তাদের বিষয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।'

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ না হলে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হওয়ার শঙ্কা খোদ ডিএমপি কমিশনারের।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, 'এই অটোরিক্সার সংখ্যা যদি রোধ করা না যায়, অচিরেই এরূপ একটি ঢাকা শহর পাওয়া যাবে যেখানে বাসা থেকে বেরোলেই আর কোনো মুভমেন্টের সুযোগ থাকবে না।'

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অবৈধ রিকশা বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। সেই সাথে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে আদালতের রায় জনগণের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে দুই সিটিকে।

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, 'ঢাকার মতো শহরে যে যা ইচ্ছে করা যায় ধারণাটা কেন আসলো? এটা দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থাপনা। অবশ্যই মহাসড়ক এবং অন্য অনেক সড়কেই প্যাডেলচালিত রিকশা এবং অটোরিক্সা চলার সুযোগ নেই। যেখানে যেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চলার সুযোগ আছে সে নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে চলার ডিটেইলস করপোরেশনের করা দরকার।'

রাজধানী থেকে অবৈধ রিকশার দৌরাত্ম্য কমাতে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে নানা কারণে। অথচ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব অবৈধ রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই- বলছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

এসএস