স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এরইমধ্যে পেরিয়েছে চার দিন। মিয়ানমারে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে দুই হাজার। আহত সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। এখনও নিখোঁজ আড়াই শতাধিক। ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে 'গোল্ডেন টাইম' হিসেবে ধরা হয় দুর্ঘটনা পরবর্তী ৭২ ঘণ্টাকে। সে হিসেবে ৯৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পরা বাসিন্দাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে এসেছে বলে শঙ্কা স্বেচ্ছাসেবক ও উদ্ধারকর্মীদের।
এ অবস্থায় শোকস্তব্ধ পুরো মিয়ানমার। দেশটিরতে জান্তা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল (সোমবার, ৩১ মার্চ) থেকে চলছে সাতদিনে রাষ্ট্রীয় শোক। এরমধ্যেই ভূমিকম্প আঘাত হানার সময়ের সঙ্গে মিল রেখে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে পালন করা হয়েছে এক মিনিট নিরবতা।
এখনও আফটারশক আতঙ্ক ও ধসে পড়া বাড়িঘর থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া বাসিন্দারা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। ঘুমাতেও ভয় পাচ্ছেন তারা। খোলা আকাশের নিচে কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। চলমান এ সংকটেও জান্তা সরকার অনেক এলাকার বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে চলমান এ গৃহযুদ্ধে আরও দুর্দশাগ্রস্ত হচ্ছেন দুর্যোগ কবলিতরা।
একইদিন ভূমিকম্পের তাণ্ডবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে প্রাণহানি বাড়ছে। এখনও নিখোঁজ ৭০ জনের বেশি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলি উদ্ধার কর্মীসহ বহুজাতিক দলগুলোর সহায়তায় ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর তাভিদা কামোলভেজ বলেন, 'আমারা স্ক্যান করে পাঁচ থেকে ছয়টি মৃতদেহের মতো বস্তু সনাক্ত করেছি। স্ক্যানে মৃতদেহের আকৃতি ধরা পড়েছে। তবে কোনো অঙ্গের নড়াচড়ার সংকেত নেই।'
ভূমিকম্পে ফাটল ধরা অনেক ভবন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে সময় কাটছে তাদের।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'উদ্ধারকারী দলগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আতঙ্কের মধ্যে এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।'
উদ্ধারকারীদের মধ্যে একজন বলেন, 'আনুষ্ঠানিক নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমরা এই সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাব। মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি।'
ভূমিকম্পে নির্মানাধীন ৩০ তলা ভবনটি ধসে পড়ার পর নির্মাণস্থল থেকে নেয়া ইস্পাতের নমুনা পরীক্ষা করছে থাই কর্তৃপক্ষ। নিম্নমানের ধাতু ও ইস্পাতের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় ভূমিকম্পে ভবনটি ধসে পড়েছে কি না- তা তদন্তে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।