জুলাইয়ের শেষভাগ। তখন কোটা সংস্কারের আন্দোলন গড়িয়েছে রাজপথে। আন্দোলন থামাতে বুলেটকেই বেছে নিয়েছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একের পর এক মৃত্যু আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া হামলার কথা শুনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি ৩৬ বছরের বাবু। ছাপাখানার কর্মচারী হয়েও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। শনির আখড়ার বাসা থেকে নিয়মিত অংশ নিতেন শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে।
২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেন বাবু। গলি থেকে মিছিল উঠে যায় প্রধান সড়কে। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে শুরু হয় গুলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা।
সেখান থেকে বাবুকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসক জানান, বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় বুলেট। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বাবুর খাদ্যনালি, মূত্রথলি ও কোমরের হাড়।
একমাস পর তাকে বিএসএমএমউতে স্থানান্তরিত করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উচ্চতর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সকালে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়েন বাবু। সেখানে বেজথানি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তিনি।
আহত বাবুর বাবা বলেন, ‘প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ একমাস রেখেছিলাম কিছু উন্নতি হয়নি পরে সেনাবাহিনীর সাহায্যে পিজিতে আনা হয়। এখন পিজি থেকে থাইল্যান্ড পাঠানো হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুসরা বলেন, ‘সে আগে পাঁচ দিন আইসিইউতে ছিল, এখন উনাকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বেজথানি হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।’
বিমানবন্দরে বাবুকে বিদায় জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, শুধু বিদেশে চিকিৎসা নয়, আহতদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করবে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ওনার জন্য একটা বোর্ড করা হয়েছিল। তারা মনে করছেন, ওনার আরো উন্নত চিকিৎসা হওয়া দরকার। কারণ তার পায়খানার রাস্তায় ইনফেকশন হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অপারেশন করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন নয় বিষয়টা। আগে ইনফেকশন কমিয়ে এনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে হবে। সেজন্য খাবার দরকার কিন্তু সে খেলে খাবার রাখতে পারছে না। এসব কারণে তাকে বিদেশে উচ্চ চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে।’
এ নিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত পাঁচজনকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হলো। আরও অনেককেই পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।