বিষন্ন-উৎকন্ঠা আর দুশ্চিন্তায় মাখা এ চলাচল। তবু যন্ত্রণা উপশমে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ১২'শ আসনের বিপরীতে যেখানে রোগী ভর্তি থাকেন তিনগুনের বেশি। বেশিরভাগ রোগীর ঠাঁই হয় হাসপাতালের মেঝেতে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘আইসিইউ, কার্ডিওলোজি এইসব জায়গায় রোগীর উপচে পরা ভিড় থাকে। কারণ এই বিশেষায়িত সেবা রাজশাহী মেডিকেল বাদে কাছাকাছি অন্য কোথাও নেই।’
হাসপাতালটির এ অবস্থায়, রাজশাহীর চিকিৎসা খাতে আমূল পরিবর্তনে আনতে, গেল কয়েক অর্থবছরে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ৭টির বেশি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইউনিট। যার মধ্যে অধিকাংশের কাজ সম্পন্ন হলেও শুরু করা যায়নি পূর্ণাঙ্গ সেবা। কিন্তু কেন!?
রাজশাহী গণপূর্ত-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘ইক্যুপমেন্ট এখনো সব নেই। এগুলোর জন্য একটু দেরি হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করতেছি জুন ২০২৫ এর মধ্যে শেষ করবো।’
নির্মাণ কাজ, হস্তান্তর জটিলতার পাশাপাশি লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ হাসপাতালগুলোর কাজ শেষ করতে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। তবে এই প্রকৌশলীর মতে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে, ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ১৭ তলা ভবনের কাজ শেষ হলে বার্ন, কিডনি, ক্যান্সারসহ চারটি ইউনিটের ৫শ’ শয্যার অত্যাধুনিক হাসপাতাল পাবে রাজশাহী।
এদিকে, চলতি মাসের শুরুতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। তবে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৫০ শয্যার হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা দিতে প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর যন্ত্রপাতি।
রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. হবিবুর রহমান বলেন, ‘সব অনুষজ্ঞ এখানে যুক্ত করতে হবে। যেমন কিডনির জন্য ডায়ালাইসিস থাকতে হবে। নিউরো সায়েন্স থাকতে হবে।’
সবচেয়ে বেহাল অবস্থায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতালের। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হলেও স্বাস্থ্যবিভাগ গণপূর্তের কাছে বুঝে না নেয়াসহ লোকবল নিয়োগে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাননি সিভিল সার্জন। তাতে চকচকে হাসপাতাল ভবন এখন অলস পড়ে আছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহম্মদ ফারুক বলেন, ‘লোকবল লাগবে সেই চিঠি আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আমাদের এই হাসপাতাল নেয়ার জন্য জনবল দরকার।’
রাজশাহীতে নতুন হাসপাতাল ও ইউনিট নির্মাণ হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষায়িত টিম না হলে বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থার বাস্তবতায় কোন প্রভাব ফেলবেনা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সল আলম বলেন, ‘ডাক্তার কিন্তু একা কাজ করে না তার সাথে আরো সহকারী থাকে। কিন্তু বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য পুরা টিম হতে হয় বিশেষজ্ঞ। যা এখানে কম তৈরি হচ্ছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকদের কেন্দ্রীভূত না করে প্রান্তিক পর্যায়ে সেবায় মান বাড়াতে কাজ করছে সরকার।
রাজশাহীতে নির্মাণাধীন বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো দ্রুত চালুর করা না গেলে কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় মালামাল নষ্ট হবার শঙ্কা রয়েছে।