বাস মালিকদের অনীহা আর যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দেড়যুগ পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা যাচ্ছে না। এতে শহরের ভেতরে যত্রতত্র চলছে গাড়ি পার্কিং। ভোগান্তির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র শিরোনাম বাস টার্মিনাল মোড়। একদিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, অন্যদিকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসগুলোর টিকেট কাউন্টার। ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত হাজারও যাত্রীর পদচারণায় মুখর থাকে এই পথ।
টার্মিনাল থেকে ত্রিমুখী রাস্তা দখলে রাখে সারি সারি বাস। সেই সাথে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে ওঠানো হয় যাত্রী। এতে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘নওদাপাড়া বাস স্ট্যান্ডটা যদি স্থানান্তর করা হয় তাহলে নগরবাসীর জন্য সুবিধা হবে। যেকোনো একটা বড় গাড়ি ঢুকলে পুরোটা জ্যাম লেগে যায়।’
তবে টার্মিনালে জায়গা সংকটসহ নানাবিধ অজুহাত সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বিবেচনায় এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি স্থানান্তর না করে সংস্কারের দাবি তাদের।
একজন চালক বলেন, ‘জীবনের নিরাপত্তাহীন রাস্তা একটা। যাত্রীরা আমাদের ভাড়া দিতে চায় না।’
অভিযোগ আছে বাস মালিকদের অনীহার কারণে নগরীর উপকণ্ঠ নওদাপাড়ায় সাত দশমিক চার একর জায়গায় নির্মিত বাস টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে টিকেট কাউন্টার, যাত্রীদের বসার স্থানসহ অন্যান্য অবকাঠামো।
তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, টার্মিনালটিতে পর্যাপ্ত জায়গার পাশাপাশি রয়েছে আলোর সংকট। এছাড়া সংস্কারের অভাবে যাত্রী সেবায় যা হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। তাই যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে টার্মিনালটি দ্রুত চালুর দাবি তাদের।
একজন বাসচালক বলেন, ‘গাড়িগুলো বের করতে নিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। সবসময় এখানে পানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই।’
পরিবহন খাতকে সুশৃঙ্খল করতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জায়গা বরাদ্দসহ সব পক্ষের সমন্বয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চান পরিবহন নেতারা।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার নিজে ওখানে তদন্ত করেছেন। এবং আমরা করার জন্য রাজি। আর এখানে যে বেশি যানজট হচ্ছে তার কারণ হচ্ছে ফ্লাইওভারে কাজ চলে, সেজন্য একটা রোড বন্ধ। এগুলো ক্লিয়ার হয়ে গেলে জ্যাম কমে যাবে। আমরা ওখানে চলে যাবো।’
তবে প্রশাসন বলছে, জন ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ অন্যান্য দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘এখন যারা স্থানীয় নেতারা আছেন আমাদের রাজশাহীতে তারাও যদি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে এবং বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাথে একটা যোগাযোগ বা সমন্বয় করেন যে এই টার্মিনালটা এখান থেকে নওদাপাড়া নেয়া যেতে পারে।’
রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসন ও উন্নত পরিবহন সেবা নিশ্চিতে সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত হয় নওদাপাড়া আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ বাস পার্কিং করা সম্ভব। তবে পুরোপুরি চালু না হওয়ায় এখনও শৃঙ্খলা ফেরেনি নগরের পরিবহন সেবায়।