কোন অসঙ্গতিগুলোকে সামনে রেখে আপনাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে? কোন কোন দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, 'আমাদের দু'টি দাবি ছিল যার মধ্যে প্রথমটি ছিল স্বৈরাচারের ফ্যাসিবাদের দোসর এবং যতগুলো গণহত্যা হয়েছে, বিনাভোটে নির্বাচন হয়েছে, আর এই প্রতিটি জিনিসকে যে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দিয়েছে খুনি হাসিনা ফ্যাসিস্ট সরকারের তৃতীয় শ্রেণির চাটুকার চুপ্পুকে, যার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার এক মিনিটও কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'এর সাথে আমাদের দাবি ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন আমরা আর বলি না, কারণ ছাত্রলীগের সাথে বাংলাদেশ আর যায় না। সুতরাং খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ছাত্রলীগকে শুধু গত আন্দোলনের ১৫ দিনে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যাপীঠকে যেভাবে ফিলিস্তিনের মতো তাণ্ডব চালিয়েছে, যেটা ইসরাইল ফিলিস্তিনের ওপর চালায়। সুতরাং সেই দায়ে অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দাবি ছিল আজকের মধ্যে একজন উপদেষ্টা এসে তারা প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যাপারে কথা বলবেন যে কখন তারা এই চুপ্পুর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কখন করাবেন। ছাত্রলীগকে কখন তারা নিষিদ্ধ করবেন এটা নিয়েই আমাদের দাবি ছিল। এই বিষয় নিয়ে আমরা বঙ্গভবনের সামনে লম্বা সময় ধরে অবস্থান করেছি।'
এখন টিভিতে কথা বলছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।
বঙ্গবন্ধুর সময়ে হওয়া ১৯৭২ এর সংবিধান বাতিলের বিষয়ে আপনারা কোনো দাবি রেখেছেন কি না?
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, 'আজকেই আমরা বলেছি এবং এটা নিয়ে আমরা সামনে বড় প্রোগ্রাম দিবো। দেখুন, বাংলাদেশে ১৯৭২ এ যে সংবিধান হয়েছে, আমরা স্পষ্ট করে বলছি ৭২-এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। কারণ ৭২-এর সংবিধানই হলো বাংলাদেশের সেই সংবিধান যার মাধ্যমে ১৯৭২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫৩ বছরে আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় ছিল ততবার গণতন্ত্র ধ্বংস করা, সমস্ত পত্র-পত্রিকা মিডিয়াকে ধ্বংস করার কাজ করেছে। এরপর আমরা যদি গত ১৫ বছরে পিলখানা গণহতদ্যা, শাপলা গণহত্যা, ২০২৪ এর গণহত্যা, প্রতিটি গণহত্যাকে যে জিনিস দিয়ে বৈধ করা হয়েছে সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান।'
তিনি বলেন, 'এটি আসলে বাংলাদেশের সংবিধান নয়, এটি সর্বোচ্চ বলা যায় আওয়ামী লীগের দলীয় ইস্তেহার। একটি ভালো রাজনৈতিক দলের দলীয় ইস্তেহার এর চেয়ে আরও সুন্দর হয়, আরও ভালো হয়। এবং সব থেকে অবাক করা ব্যাপার হলো ৭২-এ যারা সংবিধান করেছে, তাদের তো কেউ সংবিধান করার ম্যান্ডেড দেয়নি। যারা করেছে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে সমগ্র পাকিস্তানে তারা নির্বাচন করেছিল। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের কোনো নতুন সংবিধান করার কথা ছিল না। তারা নিজেরা নিজের থেকে ম্যান্ডেড নিয়ে বাংলাদেশের জনমানুষের মধ্যে কোনো কথা না বলে তারা একটা সংবিধান প্রণয়ন করেছে।'
শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে আন্দলনে নামে ছাত্র-জনতা।
শরিফ ওসমান হাদি বলেন, 'বাংলাদেশের সংবিধান লিখেছেন ড. কামাল। এই কথাটার মধ্যেই বড় একটা ফ্যাসিবাদ লুকিয়ে আছে। পৃথিবীর কোনো দেশে কেউ সংবিধান লিখে না। সংবিধান লিখে ওই দেশের মানুষ, সংবিধান লিখে ওই দেশের আপামর জনসাধারণ। ৭২-এর সংবিধান বিভিন্ন জায়গা থেকে কপি-পেস্ট করা হয়েছে। এবং এটা নিয়ে আমাদের গর্ব করা শেখানো হয়েছে যে আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা এক বছরের মধ্যে একটি সংবিধান দিয়েছি। আর এটাই হলো বড় মুশকিল কারণ পৃথিবীর কোনো দেশ এক বছরের মধ্যে একটা সংবিধান করতে পারে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমেরিকার সংবিধান ছোট, সেটি পড়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার পর্যন্ত বুঝতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের যে ভাষা, এই ভাষা তো শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই পড়ে বুঝতে পারে না। সুতরাং যে সংবিধানে জনগণের অভিপ্রায় আছে, জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আছে সেই সংবিধান করতে হবে। সেজন্য আমরা সরকারকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও দিয়েছি।'
কতটুকু সফল হবে আপনাদের এই আন্দোলন?
শরিফ ওসমান হাদি বলেন, 'আমরা বলতে চাচ্ছি, সফল কতটুকু হবে না, সফল হবেই। অনেকে বলেছে বঙ্গভবনের সামনে বেশিক্ষণ থাকলে এখানে ম্যাসাকার হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো ম্যাসাকার ভয় পায় না। জুলাই-আগস্টের চেয়ে বেশি ম্যাসাকার আর কী হবে? আয়নাঘরের চেয়ে বেশি আর কী হবে? আমাদের এই জীবন আমরা বোনাস মনে করছি সুতরাং সংগ্রাম চলবে।'
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ করার চিত্র।
রাষ্ট্রপতির যে অপসারণ আপনারা চাচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট একটা কারণ কী উল্লেখ করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, 'সুনির্দিষ্ট কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয়, আইনের গণভিত্তি কী? তা হলো পাবলিক কনসেন্ট। আর এই পাবলিক কনসেন্ট হলো গত তিন নির্বাচনে বাংলাদেশের সংসদ অনির্বাচিত এবং অবৈধ। প্রধানমন্ত্রী অবৈধ, এই সংসদ অবৈধ। সুতরাং জনগণের ভোট চুরি করে ভোট ডাকাতি করে যে সংসদ হয়েছে, সেই সংসদ যে রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছে সে আইনি কারণেই অবৈধ। যেহেতু এর কোনো লিগ্যাল বেইজ নেই। এটা আইনি ভাষা।'
তিনি বলেন, 'আর আমাদের ভাষায়, আমরা বিপ্লব করেছি, আপনারা বিপ্লব বেহাত হতে দিবেন না। অর্ধেক বিপ্লব, অর্ধেক আইন, অর্ধেক সংস্কার, সংবিধান চলে না। বিপ্লব করলে বিপ্লবই করতে হয়। চুপ্পু পদত্যাগ করার পর কী হবে? চুপ্পু পদত্যাগ করার সাথে সাথে আমরা ড. ইউনূস সাহেবকে আহ্বান করেছি তিনি যেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর তিনি একটি বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করবেন। কারণ আমরা করেছি বিপ্লব, কিন্তু সেই অর্থে বিপ্লব উদযাপন করতে পারছি না।'