দেশে এখন
0

রাষ্ট্রপতির বক্তব্য অসত্য-অযৌক্তিক বলছেন আইনজীবীরা, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান

পদত্যাগ-অভিসংশন নিয়ে আইনে যা বলা আছে

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য অসত্য ও অযৌক্তিক মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আড়াই মাস পর এসে মিথ্যাচার করেছেন। আর ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এসব বক্তব্যের আইনগত ভিত্তি নেই।

দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করবেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। আর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ক্ষমতাও রয়েছে জাতীয় সংসদের হাতেই।

জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ ভেঙেও দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগসহ এসব ক্ষমতা দেয়া আছে।

জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারেন। পদে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির করার আইনগত সুযোগ নেই। দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রপতির সকল কাজে দায়মুক্তি সংবিধান কর্তৃক দেয়া রয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন বা অসদাচরণের অভিযোগে অভিসংশন করা যাবে। যার জন্য দরকার সংসদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত। এই প্রস্তাবের চিঠি স্পিকারের কাছে দিতে হবে। এক মাস পর আলোচনার জন্য স্পিকার অধিবেশনে উত্থাপন করবেন।

রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার তখন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া শারীরিক বা মানসিকভাবে অসামর্থ্যের কারণেও রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে।

তবে গণঅভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ করেন স্পিকারও।

এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস পর জাতীয় দৈনিকে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন সাক্ষাৎকারে জানান, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের কোনো কাগজপত্র তার কাছে নেই। এই বক্তব্যে সব মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার পর রাষ্ট্রপতির অপসারণের আইনি কোনো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। অপসারণের পদক্ষেপ নিতে আইনগত সমস্যা নেই।’

তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পালাচ্ছেন এবং সেনা প্রধানের হাতে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাচ্ছেন। তাহলে সেনা প্রধানের হাতে থাকবে। এই প্রশ্নের উত্তর রাষ্ট্রপতির চেয়ে সবচেয়ে ভালো দিতে পারবেন সেনা প্রধান। উনার কাছে কী আছে, প্রধানমন্ত্রী তো উনাদেরই তত্ত্বাবধানে গেছেন। সেটা হচ্ছে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো, রক্তপাত হতে পারতো। সেটা এড়ানোর জন্য তারা হয়তো তাৎক্ষণিক একটা ব্যবস্থা হিসেবে এটা করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, ‘তাহলে সাংবিধানিক শূন্যতার যে আলাপটা আমরা এখন তুলছি সেরকম সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হওয়ার কিছু নেই, এখানে আইনের বিশাল ব্যতয়ও ঘটারও কিছু নেই।’

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মনে করেন রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে কী উদ্দেশে আজকে এই কথা বললেন যে তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র নেই। এটা আমার কাছে অন্তত বোধগম্য হচ্ছে না। এর পেছনে হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এবং সেই উদ্দেশ্য কী সেটা তিনি নিজেই বলতে পারেন।’

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন মো. সাহাবুদ্দিন।

এসএস