বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকার প্রিয় পদের মধ্যে ডিম অন্যতম। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাছ মাংস নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে যেখানে অমাবস্যার চাঁদ সেখানে পাতে আমিষের চাহিদা মেটায় ডিম।
নানা-সময়ে ডিমের মূল্যের ওঠানামা হলেও অক্টোবর মাসে তা পৌঁছিয়েছে মানুষের গলার কাঁটার পর্যায়ে। উৎপাদন খরচ ও চাহিদা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে গত ২৫ বছরে ডিমের দাম বেড়েছে ৫০০ শতাংশ। দিনে চাহিদা চার কোটি ডিমের বিপরীতে উৎপাদন পাঁচ কোটি হলেও দামে কোনো প্রভাব পড়ছে না। বরং বারবার বিভিন্ন সময় আমদানি করতে হয়েছে পণ্যটি।
ডিমের দামের এই অস্থিরতা কাটাতে গেলো বুধবার (১৬ অক্টোবর) ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দর বেঁধে দেয় প্রতি ডজনের। সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ভোর রাতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে ১৫টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি আড়ৎদারদের কাছে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা দরে প্রতিদিন দুই বাজারে ২০ লাখ ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোরের আলো ফোটার আগেই কাপ্তান বাজারে আসতে শুরু করে ডিম বোঝাই ট্রাক। শুরু হয় বিক্রি কার্যক্রম। এসময় উপস্থিত ছিলেন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্তারা। এসময় ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন আগামী ১৫ দিন এই কার্যক্রমের আওতায় ডিম বিক্রি করবেন তারা।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, 'কাপ্তান বাজার এবং তেজগাঁওয়ে আমরা প্রতিদিন ১০ লাখ করে ২০ লাখ ডিম দেবো ১৫ দিন পর্যন্ত। এবং তাদের সাথে আমাদের কমিটমেন্ট হলো তারা ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ১২ টাকা বিক্রি নিশ্চিত করবেন।'
সরকারি সংস্থার দুই কর্তা দাবি করেন ডজন হিসেবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সায় বিক্রি করবে। এই উদ্যোগ ডিমের মূল্য কমাতে সহায়ক হবে বলেও মনে করছেন তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, 'সরাসরি আমরা উৎপাদনকারীর কাছে থেকে নিয়ে আড়ৎদারকে দিয়েছি এবং সেখানে কে কত লভ্যাংশ রাখতে পারবে তার একটা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করেছি। খুব শিগগিরই বাজার খুব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, 'এখন যদি এই মধ্যস্বত্ব না থাকে আমার বিশ্বাস ভোক্তারা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং যেটা নির্ধারণ করেছি, সেই মূলেই পাবে। আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত যেহেতু ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি সেজন্য আমাদের কাজ করাটা বেশি জরুরি। সেটা আমরা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের সমস্ত ফোর্স ব্যবহার করবো।'
এই কার্যক্রম শুক্রবার তেজগাঁও বাজারে শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তারা আশা করছেন ডিমের সাথে সাথে প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে শক্ত মনিটরিং করা জরুরি ।