দেশে এখন
0

রংপুর বিভাগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীনতা

মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন রয়েছেন রংপুর বিভাগের মানুষ। মানসিক সমস্যা মনে করলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলেও প্রতিরোধক বিষয়ে কোন ধরনের সচেতনতা নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ তরুণীই বেশি।

কামরুজ্জামান একজন ব্যাংকার। বেতন বেশ ভালোই পান। এরপরও প্রতিদিন একই কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন মাঝেমধ্যেই। একঘেয়েমি কাটাতে নিয়মিত কাজের বাইরে বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে।

ব্যাংকার কামরুজ্জামান জানান, দুই থেকে তিন দিন ছুটি থাকলে আমি চেষ্টা করি ভ্রমণ করতে। কারণ ভ্রমণের মধ্যে আমি আনন্দ খুঁজে পাই।

গৃহিণী মেহেরুন্নিসা। তারও গৎবাঁধা রুটিন। সকালে উঠে পরিবারের সবার জন্য নাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত একই কাজ করতে করতে যখন ক্লান্তি আসে, তখন মেনে নেন। তেমন কিছুই করার থাকে না।

গৃহিণী মেহেরুন্নিসা জানান, আস্তে আস্তে আমরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলছি। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছি। এই মানসিক অবসাদ থেকে আমরাদেরকে বের হতে হবে।

প্রতিদিনের ছকে বাধা ব্যস্ত জীবন, পড়াশুনায় হতাশা, মোবাইল-ইন্টারনেটে আসক্তি, কর্মক্ষেত্রে মূল্যায়ন না পাওয়ার হতাশা, পারিবারিক সমস্যাসহ নানা কারণে বাড়ছে মানসিক সমস্যা জনিত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু এ নিয়ে নেই সচেতনতা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কোনো গবেষণাও নেই বাংলাদেশে।

২০১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট একটি গবেষণা প্রকাশ করে।সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রায় সোয়া দুই কোটি মানুষ কোন না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। বড়দের মধ্যে ১৭ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৩.৯ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

মনোবিদদের কাছে যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কিশোর বয়সী এবং তরুণদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ঘরের বাইরে গিয়ে নিজেকে সময় না দিতে পারার কারণে বাড়ছে এসব সমস্যা।

মনোবিজ্ঞানী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'খেলাধুলা, ভ্রমণ, পরিবারকে সময় দেওয়া এই জিনিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলে এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী গড়ে তোলে।'

তবে রংপুর বিভাগে মানসিক সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগ থাকলেও জনবল কম। চিকিৎসকদের কাছে আসা রোগীদের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত, শুচিবায়ুগ্রস্ত, হাইপারটেনশনের রোগীই বেশি। অনেকেরই প্রয়োজন হয় ওষুধের। কারো কারো সমস্যা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধানের দাবি, যে কোন ধরনের মানসিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। শুধু বড় হাসপাতালেই নয়, জেলা বা উপজেলা ভিত্তিক হাসপাতালগুলোতেও মনোরোগ চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তিনি। যারা নিয়মিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, 'এই হাসপাতালে যদি মানসিক একটা আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করে। বেডের সংখ্যা বাড়ায়। তাহলে আমরা আরো সেবা দিতে পারবো।'

এফএস