মাঠে যখন পাকা আউশ আর আমন রোপনে ব্যস্ত কৃষক তখনই হঠাৎ দেখা দিয়েছিল আগ্রাসী বন্যার হানা। উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণ কেড়ে নেয় কৃষকের সবটুকু ফসল। আউশ, আমনসহ বন্যায় ভেসে যায় হেক্টরের পর হেক্টর জমির শাকসবজিও।
ভয়াবহ সেই বন্যার প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। কুমিল্লার সবগুলো উপজেলা থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও তলিয়ে আছে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও লাঙ্গলকোট উপজেলার প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল। যাতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না চাষীরা। এদিকে, বালু জমে গোমতীর চরাঞ্চলের অধিকাংশ জমি হয়ে পড়েছে চাষাবাদে অনুপযোগী।
একজন কৃষক বলেন, 'বন্যায় ভেঙেচুরে আমার ধানক্ষেত মার খাইছে। এখনও কিছু লাগাইতে পারছি না। এই সিজনে আর কিছু করতে পারবো না।'
তবে বন্যার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলার কৃষকরা। শীতকালীন আগাম শাকসবজি ও আমন আবাদে ব্যস্ত তারা। তবে বীজ, চারা ও আর্থিক সংকটে মৌসুমজুড়ে অনাবাদি পড়ে আছে চার লাখ হাজার হেক্টর জমি। চাষিরা বলছেন, কৃষি বিভাগ থেকে যে সাহায্য করা হচ্ছে তা সামান্য।
একজন কৃষক বলেন, 'বীজও তো ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। অল্পকিছু কিনে টুকটাক লাগাচ্ছি।'
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সাম্প্রতিক বন্যায় আউশের ২৩ হাজার হেক্টর আর রোপা আমনের ২২ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর শাকসবজি, আখ ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে চাষিরা। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকের মাঝে চারা ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে বলছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, 'কুমিল্লায় যে সবজি ছিল, তার প্রায় ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আউশের বীজ সংগ্রহ করতে পারেনি। যারা বোরো বীজ সংরক্ষণে রেখেছিল সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে। আমনের বীজও হাতে নেই। এই কয়টা ফলে আমাদের পরবর্তী মৌসুমগুলোতে আমরা হয়তো বীজের জন্য সংকটে পড়তে পারি। আমরা সেভাবেই বীজ সংগ্রহে ব্যবস্থা নেবো।'
সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লায় ৬ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর কৃষি জমি তলিয়ে যায়। যাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার।