দেশে এখন
0

গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে স্মরণ করা হলো শহীদ আবরারকে

আগ্রাসন বিরোধী শহীদ আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালে ছাত্রশিবির সন্দেহে রাতভর নির্মম-নির্যাতনে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তাকে হত্যা করে শাখা ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন হয় বিচারিক আদালতে। চূড়ান্ত রায়ের জন্য মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে। আবরারের স্মরণসভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, আবরার ফাহাদের খুনিরাই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান দমনে গণহত্যা চালিয়েছে। সন্ত্রাসী দল হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধেরও দাবি তোলেন কেউ কেউ।

'কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।'

৫ বছর আগে অক্টোবরের ৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নিজের ফেসবুকের পাতায় ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, অনন্ত মহাকালের এক যাত্রী।

এর দু'দিন পর ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার কুষ্টিয়ায় ফেরেন তিনি। কিন্তু আবরারের দেহ তখন প্রাণহীন-নিথর আর অসংখ্য অত্যাচারের চিহ্ন। অসীম মহাকাশের দিকে মহাকালের যাত্রীর মাঝখানের কয়েকটি ঘণ্টা কাটে তার প্রিয় বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৬ অক্টোবর বাড়ি থেকে ফেরার পর ছাত্রশিবির সন্দেহে তার ছাত্রলীগ বন্ধু, বড় ভাইরা ৬ অক্টোবর সন্ধ্যারাত থেকে তার ওপর শুরু করে বীভৎস নির্যাতন। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যাবার আগে মোবাইল ফোনে জীবনের শেষবারের মতো কথা হয় আবরারের। ভয়ার্ত কণ্ঠ থেকেও আঁচ করা যায়, বুয়েট ছাত্রলীগ কতটা অমানুষিক নির্যাতন করেছিল আবরারকে।

মাথা ও বুকে ক্রিকেট স্টাম্প, স্কিপিং রোপ ও হাতুড়ি দিয়ে টানা ছয় ঘণ্টা নির্যাতনের এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরার।

শাস্তি হওয়া ২৫ আসামির অধিকাংশই ছাত্রলীগের। এবং এই হত্যাকাণ্ডের জেরেই ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এ নিয়ে বিগত সরকারের একটা চাপ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভেতরে বাইরে।

জুলাই বিপ্লবের পর অবশ্য আগ্রাসন বিরোধী এই শহীদকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু উদ্যোগ স্পষ্ট হচ্ছে। যেমন, আবরার ফাহাদ মেমোরিয়াল। বুয়েটের শেরেবাংলা হল প্রাঙ্গণে আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এর ভিত স্থাপন করেন কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী বন্ধন, যিনি আবরারের স্মৃতিবিজড়িত ১০১১ রুমের বাসিন্দা। তিনি বলছেন, এতটা জোরেশোরে না হলেও আবরারের আদর্শ ঠিকই জাগ্রত ছিল শিক্ষার্থীদের মনে মনে।

বন্ধন বলেন, 'প্রতিটি পদে পদেই ওনাকে স্মরণ করি। ওনার যে আইডিওলজি, সত্য বলার সাহসিকতা, এটা আমরা সবসময় মনে প্রাণে ধারণ করার চেষ্টা করি। এবং সবসময় যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদ করার জন্য একটা লিজেন্ডের মতো আমাদের সামনে প্রতিমান হয়।'

আবরারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে স্মরণসভার মত বেশকিছু আয়োজন দেখা গেছে, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে। এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদের পিতা ও ভাই।

আবরারের ভাই বলেন, 'ভাইয়া যখন পোস্টটা দেয় তখন আমি বিছানার ওপর বসে আর ভাইয়া সোফার ওপর। ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া ছাত্রলীগ তো সব জায়গায় এ ধরনের কথাবার্তা বললে পেটায়, তুই কেন এই ধরনের কথাগুলো লিখিস? তখন ভাইয়া শুধু একটা কথাই বলছিল, দেখ সবাই হয়তো চুপ থাকতে পারে, কিন্তু কাউকে তো কথা বলতে হবে।'

আবরারের বাবা বলেন, 'দুই বছর ধরে কোর্টে আসা-যাওয়া করেছি। তারপর আমাদের কেসের রায় হয়েছে প্রায় তিন বছর হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনও আমার ছেলের হত্যার বিচার পাইনি।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, আবরারের খুনিরাই ২০২৪ এর গণহত্যার দোসর।

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'এই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পূর্বের দিন পর্যন্ত যে গেস্টরুমগুলো হতো, প্রোগ্রামগুলো হতো, গণরুমগুলো হতো তার প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া ছিল, একেকটি আবরার ফাহাদকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া নির্যাতন, নিপীড়ন করার একেকটি প্রক্রিয়া।'

সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমাদের জানামতো আমরা দেখেছি জার্মানিতে নাৎসি দলের কোনো ধরনের রাজনৈতিক কোনো অধিকার নেই। যারা বিভিন্ন জায়গায় মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আপনাদের মায়া কান্নাগুলোকে আমরা আমলে নিতে চাই না। সুতরাং আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত হবে, তারপর আমাদের অন্যকিছুর সিদ্ধান্ত।'

সমন্বয়ক আকতার হোসেন বলেন, 'ভারতের জনতার সাথে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আমাদের বৈরিতা, আমাদের শত্রুতা বাংলাদেশের প্রতি আধিপত্য নিয়ে যে নীতি নির্ধারণ করে দিল্লি, সে আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে আমাদের বৈরিতা।'

আবরার ফাহাদের স্মরণে পলাশী মোড়ে আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ মেমোরিয়াল পুনর্নির্মাণের উদ্বোধন করেছে ছাত্র-জনতার একটি প্লাটফর্ম।

এসএস