দেশে এখন
0

পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা ৩ শতাধিক পরিবার

শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ। প্রতিদিনই ভাঙছে ফসলি জমি, বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এরইমধ্যে ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। খোলা স্থানে প্রতিকূল পরিবেশে দিন পার করছেন ভাঙন কবলিতরা। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

উত্তাল পদ্মায় ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মালামাল নিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে নদী পাড়েই। এমন চিত্র শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মার মধ্যবর্তী চর পাইনপাড়ার।

গেল তিন সপ্তাহ ধরে চরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। পানি বৃদ্ধি আর প্রবল স্রোতে প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী তীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত চরের ৫টি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। প্রতিদিনই ভিটেমাটি হারাচ্ছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন অন্যত্র। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। হুমকিতে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ বহু স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে চরের অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার।

ভাঙন কবলিত মানুষ জানান, 'থাকার মতো কোন ঘর নেই। তাই যে যেভাবে পারছেন রাস্তাঘাটে কোনমতে ঠাঁই নিয়েছেন।'

ভাঙন কবলিত অনেকে বলছেন, 'বেড়িবাঁধ দেয়া হলে এই ভাঙন থেকে রক্ষা পেত অনেকেই।'

৮ বিঘা সম্পত্তির মালিক ছিলেন প্রবীণ এক দম্পতি। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন আশ্রয় নিয়েছেন খুপড়ি ঘরে।

ছবি: ভাঙনে সহায় সম্বলহীন এক প্রবীণ দম্পতি

সোমর আলী শেখ আর রাবিয়া খাতুনের মতো ভাঙনের শিকার দুই শতাধিক পরিবার নদী পারি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মাঝিরঘাটের বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অলস পড়ে থাকা জমিতে আর পাশের বালুর মাঠে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে আশ্রয়হীন মানুষের তালিকা। বৈরী আবহাওয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও অনেকে তৈরি করতে পারেননি। অরক্ষিতভাবেই রেখে দিয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বৃষ্টির পানিতে জমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে আশ্রয়স্থলটুকুও। আয় রোজগার না থাকায় দু'বেলা খাবার জোটানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ এসব মানুষের। তারও পরে নেই বিশুদ্ধ পানি আর স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়েই করছেন বসবাস। এতো সব পরেও সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানই সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ায়নি অভিযোগ, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর।

তারা জানান, বৃষ্টি হলে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর রান্না করার উপায় থাকে না। আবার রোদ উঠলে খুপড়ি ঘরগুলোতে থাকার অবস্থা থাকে না।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জাজিরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে পানি কমলে বরাদ্দ সাপেক্ষে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন,'আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারি সহায়তা হিসেবে চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।'

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, 'ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অর্থ চেয়ে পত্র দিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে আগামী শুকনা মৌসুমে পাইনপাড়া এলাকায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

তবে, পদ্মার ভাঙনকবলিত মানুষের দাবি, আশ্বাসে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিক কর্তৃপক্ষ। কারণ, আয় রোজগার না থাকায় দু'বেলা খাবার জোটানোই কঠিন হচ্ছে অনেকের জন্য।