এর আগে আবু সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাঈদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, 'এই দুই সদস্য পুলিশ লাইনসে নজরদারিতে ছিলেন। মহানগর পুলিশ তাদের হস্তান্তর করেছে।'
আবু সাঈদ হত্যার পর কোটা সংষ্কার আন্দোলন বারুদের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ক্যাম্পাসে ও রাজপথে একযোগে নতুন মাত্রা পায় কোটা সংষ্কার আন্দোলন। ১৬ জুলাই রংপুরে গুলির সেই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সেই পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি তীব্র হয়।
অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাসের পর গ্রেপ্তার করা হলো বহুল আলোচিত সাঈদ হত্যার মূল অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে। গ্রেপ্তারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় আদালতে তোলা হয় আমির আলী ও সুজন চন্দ্রকে।
সকাল সাড়ে নয়টায় রংপুর মূখ্য মহানগর আদালতে শুরু হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি। আদালতে আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালতের সঙ্গে কথা বলেন আটককৃত দুই পুলিশ সদস্য। জানান, উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশ ও পূর্ব পরিকল্পনায় সেদিন গুলি করেন তারা। আর বাদীপক্ষের আইনজীবীরা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর গুলির কঠোর সমালোচনা করে চান সর্বোচ্চ বিচার।
পরে শুনানি শেষে রংপুর মেট্রোপলিটান তাজহাট ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত- ২ এর বিচারক আসাদুজ্জামান ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই সাথে রিমান্ডে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা প্রতিপালন করার আদেশও দিয়েছেন আদালত। এই হত্যার নির্দেশ দাতা পরিকল্পনাকারীসহ সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি বাদীপক্ষের আইনজীবীর।
এসময় ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করে মামলার দীর্ঘসূত্রতা না রাখার দাবি জানিয়ে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দারস্থ হবার হুঁশিয়ারিও দেন বাদীপক্ষ।
এর আগে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদি হয়ে ১৮ আগস্ট মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। একই ঘটনায় গত ৩ আগস্ট এই দুই পুলিশ সদস্য এএসআই আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের সকল কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী। এসময় তদন্তকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজন মনে করলে সকল ধরনের সহযোগিতার জন্য আরপিএমপি প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন নবনিযুক্ত আরপিএমপি কমিশনার। এসময় সাঈদ হত্যায় জড়িত বাকি পুলিশ সদস্যরা পুলিশের হেফাজত কিংবা নজরদারিতে আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেট্রো কমিশনার বলেন, 'অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা যে র্যাংকের অফিসারই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।' এ সময় নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরবাসী গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান তিনি।
গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
এরপর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদি হয়ে ১৮ আগস্ট মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানায় ১৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যার ঘটনায় গত ৩ আগস্ট এই দুই পুলিশ সদস্য এএসআই আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল।