দিন যতই যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে বন্যার ক্ষত। বিধ্বস্ত বাড়িঘর, ভেসে গেছে মাঠের ফসল, পুকুর ও ঘেরের মাছ। বন্যার ভয়াল থাবায় বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক হয়ে পড়েছে চলাচলে অনুপযোগী।
কোথাও একেবারে বিধ্বস্ত সড়ক আবার কোথাও ধসে পড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। ইট, খোয়া, পিচ উঠে অধিকাংশ সড়কের কঙ্কাল রূপ।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের শিকারপুর-নানুয়ার বাজার সড়ক। গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে নদীর তীরবর্তী সড়কটিতে সরাসরি আঘাত হানে উজানের তীব্র ঢল। বন্যার খরস্রোতে সড়কটি ভেঙে পরিণত হয়েছে খালে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বুরবুড়িয়া ও বেড়াজালসহ ছয় গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা।
সড়কে সড়কে ভাঙ্গন এবং গর্ত জানান দিচ্ছে কতটা আগ্রাসী ছিল কুমিল্লার বন্যা।
বন্যার পানি যতই কমছে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। সড়কে সড়কে ভাঙ্গন, গর্ত জানান দিচ্ছে কতটুকু আগ্রাসী ছিল এবারের বন্যা।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সড়কের এতই বেহাল দশা যে এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগে মেরামত করে নেয়ার মত অবস্থা নেই।
ছবি: কুমিল্লার ক্ষতিগ্রস্থ একটি সড়ক
চব্বিশের বন্যায় প্লাবিত বুড়িচং, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়াসহ কুমিল্লার ১৪ উপজেলা। মহাসড়ক থেকে গ্রামীন কাঁচা সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট বন্যার ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাইনি কিছুই। সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পৌরসভার দেয়া তথ্যে, এ জেলায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২শ কিলোমিটার সড়কের। স্থানীয়রা বলছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সড়কগুলো টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণসহ পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে পানি নিষ্কাশনের পথ খুঁজতে হবে।
পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্টসহ গুণগত মান রক্ষা করে সড়ক নির্মাণের কথা জানালেন কুমিল্লার সমাজকর্মী মাসুক আলতাফ চৌধুরী।
জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের এক হাজার ৬৪ কিলোমিটার সড়ক এবং ৩৫টি ব্রিজ ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ এবারের বন্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
রাস্তা নির্মাণের সাথে সাথে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করা হয়। এছাড়া পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করতে অনেক প্রতিবন্ধতকার কথাও জানালেন, কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক।
তবে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অভিদপ্তরের অধীনে থাকা রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করা হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।
চলতি বন্যায় কৃষিখাত, মাছের ঘের, প্রাণিসম্পদ, রাস্তাঘাট ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মিলিয়ে কুমিল্লায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।