এর আগে, গত ২২ আগস্ট রায়পুরার চরাঞ্চল শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন। এরপর থেকেই সরব হয় চরাঞ্চলের সচেতন সমাজ।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানায়, আগে এসব অঞ্চলে টেটার বিস্তর ব্যবহার থাকলেও যুগের পরিবর্তনের সাথে বেড়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, ফলে ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আধুনিক এসব আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি চরাঞ্চলের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত সকলের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এলাকাবাসী।
সাবমিয়া নামে এক মানববন্ধনকারী বলেন, ‘চলতি মাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে ছয় জন নিহত হয়েছেন। সকলের শরীরেই গুলির চিহ্ন ছিল। নরসিংদী জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র চরাঞ্চলে রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এগুলো দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাই।’
কনকতারা বেগম নামে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে আমার সন্তান আনিস মিয়া নিহত হয়েছে। চরাঞ্চলে আর কোনো প্রকার সংঘর্ষ চাই না আমরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক যুগ ধরে লেগে থাকা সংঘর্ষের সমাধান চাই। সেই সাথে অভিযুক্ত সকলের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
খোদেজা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘নিহত ৬ জনের মধ্যে আমার মেয়ে ফিরোজা বেগম ছিল। আমার মেয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। চরাঞ্চলে এরকম ঘটনা নতুন নয়, আমরা আর কোন সংঘর্ষ চাই না। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।’
আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রকিব হাসান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরাঞ্চলের এই সংঘর্ষ নিয়ে আমরা বিব্রত। আমরা এসবের সমাধান চাই। নতুন প্রজন্মের আমরা আর কোনো প্রকার সংঘর্ষ চাই না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বার বারই এই ধরনের সংঘর্ষ হচ্ছে রায়পুরার চরাঞ্চলে। এসব থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
প্রসঙ্গত, রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগরের সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে গত ২ মাস ধরে একই এলাকার হানিফ মাস্টার গ্রুপ এবং সাবমিয়া গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। গত ৬ আগস্ট থেকে সেটি তীব্র আকার ধারণ করে। দ্বন্দ্বের জেরে বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে এবং দিবাগত রাতে সেটি টেটাযুদ্ধে রূপ নেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) হানিফ মাস্টার গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গুলির আঘাতে মোট ৬ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন, সায়দাবাদ গ্রামের ইসমাইল বেপারির ছেলে আমির হোসেন (৬৫) ও বাদল মিয়া (৪৫), শাহীন মিয়ার ছেলে জুনায়েদ (১৬), বাঘাইকান্দি গ্রামের সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৩৫), আব্বাস আলীর ছেলে আনিস মিয়া (৩০) এবং একই এলাকার আসাবউদ্দিনের ছেলে সিদ্দিক (২৮)।
এর মধ্যে বাদল মিয়া (৪৫) এবং সিদ্দিক (২৮) ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায়। বাকিদের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। এই ঘটনায়, ২৫ আগস্ট দুপুরে রায়পুরা থানায় সায়দাবাদ গ্রামের এরশাদ মিয়া ও মো. ইকবাল বাদী হয়ে দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।এরশাদ মিয়ার করা মামলায় প্রধান আসামি দেয়া হয়েছে হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে।
এ ছাড়া মামলায় ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে ইকবালের করা মামলায়ও হানিফ মিয়া ওরফে হানিফ মাস্টারকে প্রধান আসামি করে আরও ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এখনো পর্যন্ত আসামি গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছেন মামলার দুই বাদী এরশাদ মিয়া ও মোহাম্মদ ইকবাল। এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.শাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’