নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের হিন্দু পল্লী। এখানে প্রতিদিনের মতোই শুরু হয়েছে আরেকটি সকাল। গবাদি পশু পালন ও গৃহস্থালির নানা কর্মে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। আর শৈশবের দুরন্তপনায় মেতেছে শিশু কিশোররাও। এমন চিত্রই বলে দেয় এই পল্লিতে নেই বিভেদের লেশমাত্র।
একই চিত্র দেখা যায়, উত্তরের অন্যান্য সনাতন পল্লীতেও। মন্দিরে চলমান পুজা অর্চনাই বলে দেয় ভাঙচুর আর লুটপাটের প্রচারণা কেবলই গুজব। যার প্রমাণও মেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের কথায়।
হিন্দু বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'এখানে কোনো হুমকিও নাই বাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি।'
আরেকজন বলেন, 'মুসলমানরা এসে বলে গিয়েছে তোমাদের কোনো ভয় নেই। আমরা এখানে আছি তোমাদের পাহারা দিবো।'
দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, পাড়া মহল্লা ও মন্দিরে লাগেনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আঁচ। এমনকি তাদের নিরাপত্তায় মন্দির ও মহল্লায় পাহারায় ছিলেন মুসলিমরা। একই কথা জানান দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার সংখ্যালঘুরাও।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, 'আওয়ামী লীগের সাথে যারা ছিল তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে তবে সেটা যেদিন শেখ হাসিনা পালিয়েছে সেদিন ঘটেছে। এরপরে এইরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।'
এদিকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুরের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে প্রাণ যায় হারাধন রায় নামে এক নেতার। সেসময় হারাধনের মৃত্যুকে দুষ্কৃতিকারীরা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে বলে জানান রংপুর সিটি মেয়র।
রংপুরের সনাতন ধর্মের নেতারা বলছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা চলছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে রংপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৈধ্য খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুসান্তি ভৌমিক বলেন, 'গুজবের কারণে আমাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা গুজবে কান দিবেন না।'
রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ২৩ লাখ সনাতন ধর্মের মানুষের বসবাস। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গেল ৫ আগস্টের পর ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু মানুষের ওপর ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সে তালিকায় রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের অন্তত ৩০টি জায়গায় হামলার কথা বলা হয়। এজন্য ব্যাক্তিগত বিরোধ ও অতিমাত্রায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে দুষছেন স্থানীয়রা।