বিদেশে কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে রংপুর, প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে

.
অর্থনীতি
এখন জনপদে
0

প্রবাসী আয়ে ভর করে যেখানে আমূল বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ জনপদের অনেক জেলা সেখানে রংপুরের তরুণদের কাছে তা এখনো অধরা। গেলো দেড় দশকে বিদেশে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হলেও রংপুর থেকে এ সংখ্যা এখনো ৪০ হাজারের নিচে। বিভাগে রিক্রুটিং এজেন্সি না থাকা, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়, শ্রমবাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকাসহ এ খাতের সরকারি দপ্তরগুলোর নিষ্ক্রিয়তা উত্তর জনপদকে ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

উত্তর জনপদের সঙ্গে মঙ্গা, অভাব আর দরিদ্রতার সম্পর্ক যেন নিয়তির অনিবার্য বাস্তবতা। এখানকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ফসলের ক্ষেত কৃষি নির্ভর অর্থনীতির যে চিত্র তুলে ধরুক না কেন, বেকারত্ব আর অদক্ষতাও করুণ বাস্তবতা।

দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ উত্তরের আট জেলা নিয়ে গঠিত ১৬ হাজার ৩৭৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর বিভাগে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের বাস।

কাগজে কলমে শিক্ষিতের হার ৭০ শতাংশ বলা হলেও বড় পরিসরে কর্মসংস্থান বলতে কেবল নীলফামারীর সৈয়দপুরের উত্তরা ইপিজেড। যেটি এখানকার অর্থনীতির পুষ্টি জোগাতে কাজ করেছে আলাদীনের প্রদীপের মত। কিন্তু বিভাগের বাকি জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে সিংহভাগ মানুষের আয়ের নাজুক অবস্থা।

এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে শস্য বিপ্লব ঘটলেও তা ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের ফারাক মেটাতে পারেনি। এমনকি দক্ষিণের মানুষের তুলনায় এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানেও রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আর এই বৈষম্যের নেপথ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চল থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নিম্নহার।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে রংপুর জেলা থেকে কাজ নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে ৩৩ হাজার ১০৪ জন। অথচ একই সময়ে সারা দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৭১৬ জন। সেই হিসেবে রংপুর থেকে জনশক্তি রপ্তানির হার মাত্র শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ।

অথচ গেলো এক যুগে কেবল কুমিল্লা জেলা থেকে প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নিম্নহারের কারণে শিল্পায়ন কিংবা বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রংপুর। স্বল্পমূল্যে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা শ্রমের মাধ্যমে দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না এ অঞ্চলের মানুষ, বলছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘আয় কম হওয়ার কারণে তাদের সঞ্চয় কম। সঞ্চয় কম হওয়ার কারণে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন সেটা থাকে না। এছাড়া বিদেশে যাওয়ার জন্য যে অর্থটা দিতে হয়, বিভিন্ন মধ্যস্বত্তভোগী, এজেন্সি পাড় হয়ে সেটার পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়।’

এদিকে গেলো বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমালেও রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে এই সংখ্যা মাত্র ২১ হাজার ৬৭০ জন।

গেলো বছর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে ৫ হাজার ১০৮ জনের যেটি রংপুর বিভাগের একক জেলা হিসেবে সর্বোচ্চ, আর ৪ হাজার ৩২১ জন গিয়েছে রংপুর জেলা থেকে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এছাড়া ঠাকুরগাঁও থেকে ২ হাজার ৫৮৯, নীলফামারী থেকে ২ হাজার ২৫৪, লালমনিরহাট থেকে ১ হাজার ৬৫০ আর পঞ্চগড় থেকে এ সংখ্যা মাত্র ১ আজার ৪৪৫ জন। এছাড়া শস্য ভাণ্ডার দিনাজপুর থেকে প্রবাসী কর্মী সংখ্যা খানিকটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩০৩ জনে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনটাকে পর্যালোচনা করে প্রপারলি যেসব লোক যেতে চায়, বিশেষ করে দালালদের দৌরাত্ম্য থেকে বের হয়ে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ থাকলে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠবে।’

এ অবস্থায় নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি কিংবা বিদ্যমান বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রংপুর বিভাগ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার না বাড়ানো গেলে বেকারত্ব আর দরিদ্রতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে আরও যে বহু পথ পাড়ি দিতে হবে এ কথা বলাই যায়।

অবশ্য এজন্য বিপুল অর্থ খরচ করে রংপুরের দুই উপজেলায় দুটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও সে তুলনায় মিলছে না উপকার। বিগত সরকারের গাফিলতিতে এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে অবকাঠামো সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে।

এএইচ