রেমিট্যান্স আয়ে উল্টো চিত্র দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে

রেমিট্যান্স প্রবাহে সর্বনিম্ন রংপুর

মুদ্রাবাজার
অর্থনীতি
0

ঈদ ঘিরে যখন ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে জমজমাট রেমিট্যান্স প্রবাহ তখন উল্টো চিত্র রংপুরে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি তো বটেই, ঈদ ও নববর্ষ ঘিরেও তলানিতে রংপুর বিভাগের প্রবাসী আয়। এর মধ্যে জেলা হিসেবে সর্বনিম্ন লালমনিরহাট। শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়তে উত্তরাঞ্চল থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসী কর্মী পাঠানো না গেলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসবে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে গতি আসে তা কেবল প্রবাসী পরিবারের আনন্দের কারণই হয় না বরং তার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে যার মতো আঁকে পরিকল্পনার ছক। কেননা এ আয় থেকেই রাষ্ট্র শোধ করে বৈদেশিক দেনা। ক্রমশ বড় হয় দেশের রিজার্ভের সূচক।

প্রবাসী আয়ে ভর করে একদিকে যেমন আমূল বদলে গেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চেহারা তার ঠিক উল্টো চিত্র উত্তরে। এবারের ঈদেও কাটেনি খরা। পরিসংখ্যানের চিত্র অন্তত তাই বলে।

চলতি ঈদ মৌসুম কেন্দ্র করে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরে রেমিট্যান্সে জোয়ার আসলেও খরা কাটেনি দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর কিংবা নীলফামারীতে। বরং চলতি অর্থবছরে দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় এসেছে মাত্র ১৬.০১ মিলিয়ন ডলার। যা একক জেলা হিসেবে দেশে সর্বনিম্ন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের অন্য বিভাগে রেমিট্যান্স আসে মিলিয়ন ডলার হিসেবে হাজারের অংকে। অথচ রংপুর বিভাগে এ সংখ্যা তিনশ' মিলিয়নের কিছু বেশি। আর বিদায়ী অর্থবছরে ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ৬৫৯ মিলিয়ন, সিলেট দুই হাজার ৫৪৩, চট্টগ্রামে ছয় হাজার ৭৮০, খুলনায় ৯২৬, রাজশাহী বিভাগে ৭৩১, বরিশালে ৫৬০, ময়মনসিংহে ৪০৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসলেও রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ৩০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, 'যদি সরকারিভাবে বিভিন্ন সরকার টু সরকার শ্রমবাজার খুঁজে বের করে ওখানে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে সেক্ষেত্রে সরকার এই পিছিয়ে পড়া, যেখানে রেমিট্যান্স কম আসছে এবং বেকার সমস্যা বেশি, এইসব এলাকাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লোক পাঠানোর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তাহলে এখান থেকে মানুষজন বেশি গেলো, পাশাপাশি এখানে যে রেমিট্যান্সের প্রবাহ সেটা বৃদ্ধি পেলো।'

এদিকে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রংপুর ও গাইবান্ধায় জেলায় ৫০ মিলিয়ন ডলার, কুড়িগ্রামে ৩৪, লালমনিরহাটে ১৬, নীলফামারিতে ৩০, পঞ্চগড়ে ২১ ও ঠাকুরগাঁও এ রেমিট্যান্স এসেছে ২৫ মিলিয়ন ডলার। সংখ্যার মোটে বিভাগের মোট প্রবাসী আয় ৩০৫ মিলিয়ন ডলার যা বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যানে সর্বনিম্ন।

অর্থনীতি বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, 'এগুলোকে ইমপ্লিমেন্ট করতে গেলে, পলিসি এনে সারাদেশের সব কর্ণারেই কিন্তু আমরা সুন্দরভাবে এই রেশিওকে বাড়াতে পারি। যেটা দিনশেষে আমাদের ইকোনোমির রেমিট্যান্সের যে অংশ, ওভারঅল ইকোনোমির যে অংশটা আছে, যেটাকে আমরা দক্ষ বা অদক্ষ জনশক্তি বলি, সেখান থেকে যে টাকা আশার কথা সেটা আমরা কাঙ্ক্ষিতভাবে আনতে পারবো। যদি সে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।'

উৎসব রঙিন হওয়া, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কিংবা শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, এসব বাস্তবায়নের নেপথ্যে প্রবাসী আয়ের প্রচ্ছন্ন এক প্রভাব বিদ্যমান তা, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখন ধ্রুব সত্য। ৫৫ বছর বয়সী বাংলাদেশে উত্তর দক্ষিণ কিংবা বিত্তের যে বিভাজন তা ভাঙ্গতে রংপুর বিভাগ থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের গতি বাড়ানো যে বেশ জরুরি তা সহজেই অনুমেয়, সংকট সমাধানে একদিকে যেমন দরকার এ অঞ্চলের মানুষের সদিচ্ছা সঙ্গে প্রয়োজন কার্যকর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।

এসএস