বরিশালের বারোইপাড়া বিশারকান্দি থেকে সাভারের ফাইলেরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৩৫ বছর বয়সী আকলিমা। অস্বাভাবিক দুই পা ও দুই হাত নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়ছে তার।
১৬ বছর বয়সে আকলিমার এক পা ফুলে ওঠে। তখন গ্রামের কবিরাজের পরামর্শে চলে চিকিৎসা। কিছুটা উন্নতি হলে সংসার গড়েন। যদিও সে সুখ বেশি দিন টেকেনি। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ধীরে ধীরে ফুলে বিশাল আকার ধারণ করে তার দুই পা।
আকলিমা বলেন, ‘৬ মাস থেকে ১ বছর পর পর এ রোগ দেখা দিতো। জ্বর হলেই রোগ বেড়ে যেত।’
মূলত কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশার মাধ্যমে ফাইলেরিয়া নামের এ রোগ ছড়ায়। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় সব জেলায় গোদ রোগী দেখা যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ালে ব্যক্তির শরীর থেকে এ রোগের জীবাণু মশার দেহে ঢুকে পড়ে। পরে ওই মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই জীবাণু ঐ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
গোদ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে পঙ্গু করে দেয়। এতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ওপর। এ রোগের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারে বাড়ে জটিলতা ।
ফাইলেরিয়া ও জেলারেল হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা আছে ফাইলেরিয়া রোগীর হাত পা ফুলে গেলে অপারেশন করা নিষিদ্ধ। দুভার্গ্যবশত আমাদের এখানে সুযোগ পেলেই অপারেশন করে। পা কেটে ফেলে। এতে রোগীর কষ্ট আরও বেড়ে যায়।’
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ছাড়াও অন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসীদের মাধ্যেমেও এ রোগ ছাড়াতে পারে। যদিও এ নিয়ে নেই জরিপ কিংবা গবেষণা।
গোদ রোগ নিয়ে এখনও রয়েছে সামাজিক কুসংষ্কার। লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসার আওতায় আনা হলে জীবন যাত্রার পরিবর্তনে কর্মক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি কমে, বলছেন চিকিৎসক।
গোদ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যাদের অধিকাংশ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। যদিও উদ্বেগের বিষয় গোদ রোগ বিস্তারে নতুন এক মশার উপস্থিতি মিলেছে।
গোদ রোগ ছড়াতে কাজ করা কিউলেক্স মশা দেশে নতুন না হলেও ম্যানসোনিয়া মশার অস্তিত্ব মিলেছে। বিশ্বের বহু দেশে এ মশা থাকলেও বাংলাদেশে এ প্রথম পাওয়া গেছে। মূলত এই মশা জলাশয়ে জন্মে। বংশবিস্তারে ডিম পাড়ে কচুরিপানার শিকড়ে।
কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ম্যানসোনিয়া মশা বাংলাদেশে ছিল না তবে বাংলাদেশে এ প্রথম পাওয়া গেছে। মূলত এই মশা জলাশয়ে জন্মে। বংশবিস্তারে ডিম পাড়ে কচুরিপানার শিকড়ে।’
এক সময় গোদ রোগ দেশের একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা ছিলো। গতবছর সরকার বাংলাদেশকে গোদ রোগ মুক্ত ঘোষণা দেয়। এর অবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় অংশীদারিত্ব ও নজরদারি পদ্ধতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।