কর্পোরেট
0

বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস ও হাড়জোড়া রোগের চিকিৎসায় ডিপিআরসির সাফল্য

ঢাকা পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ডিপিআরসি, রাজধানীর শ্যামলীতে এটির যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে। প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা সেবায় সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি, দ্রুত রিপোর্ট প্রদান, মনোরম ও রোগী বান্ধব পরিবেশে অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা সাফল্য দেখিয়ে চলছে প্রায় ২০ বছর ধরে। আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতায় অবিচল স্লোগান নিয়ে চলা প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের অনেকের মন্তব্য ডিপিআরসি পরিণত হয়েছে রোগ নিরাময়ের নির্ভরযোগ্য পুনর্বাসন সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

রোগিদের একজন বলেন, ‘আমি এখান ভিডিও দেখে এখানে আসি ডাক্তার দেখাতে। ৯ দিন চিকিৎসা নিয়ে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছিলাম তবে তেমন ঠিক হয়নি পরে এইখানকার কথা শুনে এখানে আসি।’

এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা দেয়া হয় অপারেশনবিহীন কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্ট্রোক ও মেরুদণ্ডের ব্যথার মতো জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের শতভাগ চিকিৎসা। এছাড়াও সব ধরনের আর্থাইটিস, স্পন্ডালাইসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, হাড় ও কোমর জোড়ার ক্ষয়, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস ও স্ট্রোক পরবর্তী চিকিৎসা। অপারেশনের পর হাত পা শুকিয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়াসহ বিভিন্ন রোগের সেবা প্রদান করা হয়।

ডিপিআরসিতে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব রাজধানীর লালবাগের মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। এ দীর্ঘ সময়ে নানা জায়গায় চিকিৎসা নিলেও কোনো ধরনের উপশমের সাড়া মেলেনি। এরই মধ্যে বাড়তে থাকে রোগের জটিলতা। একসময় বাম হাত-পা সহ পুরো শরীরের বামপাশ অকেজো হয়ে যায়। বলতে পারতেন না তেমন কথাও।

শেষ চিকিৎসা হিসেবে ভর্তি হন ডিপিআরসিতে, চিকিৎসা নেয়ার ১ মাসের মাথায় নড়াতে পারেন বাম হাত-পা; বলতে পারেন কথাও। তাইতো বাক বিনিময়ে আবেগের এই আনন্দ অশ্রু।

মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৬ বছর আগে প্যারালাইজড হয়েছে। আমি সিরাপি গিয়েছি ২ বার। ভালো হয় নাই। ১ বছর এখানে আসছি এখন ভালো অনুভব করছি।’

এদিকে সৌদি প্রবাসী জালাল আহমেদ স্ট্রোক করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে নানা জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু পাননি কোন সুফল, ডিপিআরসির সন্ধান পাওয়ার পর এখানে সেবা নিয়ে আগের চেয়ে সুস্থ হয়েছেন, তার সহধর্মিনী নাজমা আক্তারের আশা এখানেই সুস্থ হবেন জীবনসঙ্গী জালাল আহমেদ।

নাজমা আক্তার বলেন, ‘সৌদি আরবে স্টোক করে তিন মাস আইসিইউতে ছিল। দেশে এনে এখানে চিকিৎসা করাচ্ছি এখানে।’

আনোয়ার হোসেন, জালাল আহমেদের মতো চল্লিশ বছরের ইমদাদ হোসেন করোনার টিকা নেয়ার পর মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। জানালেন, ডিপিআরসির চিকিৎসায় কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার পর থেকে আমার সমস্যা শুরু হয়।’

ময়মনসিংহের ৫৫ বছরের নুরুল ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সময় হিপ জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। দেশের বাইরে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ হলেও রোগ আর নীরোগ হয়নি। দেশে ফিরেও চিকিৎসা নিয়েছেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কিন্তু ফলাফল আগের মতোই যোগফল শূন্য।

চিকিৎসা সেবায় সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি। ছবি: এখন টিভি

কয়েকমাস আগে ইউটিউবের ভিডিও দেখে ছুটে আসেন শ্যামলীর ডিপিআরসিতে। তাঁর দাবি, কয়েকমাসের চিকিৎসায় আগের মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন। তাইতো এবার সুস্থ হয়ে হাজির হয়েছেন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায়।

নূরুল ইসলাম বলেন, ‘৮ থেকে ৯ দিন থেকে আমি এখান থেকে চলে যায়। এরপর ব্যায়াম করে এখন মোটামুটি সুস্থ আছি।’

তাঁর মতো চিকিৎসা নিতে আসা আরো কয়েকজন রোগীর সঙ্গ কথা বলে জানা গেল পিএলআইডি সমস্যা, এভিএন, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথাসহ নানা রোগের বাসা বেঁধে এসেছেন ডিপিআরসিতে। তাঁদের অনেকের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না হলেও, এখন বুক বেঁধেছেন সুস্থ হবার।

অস্ত্রোপচার ছাড়া জনপ্রিয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসা পদ্ধতিতে রয়েছে নিজস্বতা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ডিপিআরসিতে চিকিৎসা নিতে আসছেন বিদেশিরা। থাকছে স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ডিপিআরসি সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শওকত আলী বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে আসাটা একেবারে সহজ। রোগিরা ফোন কলের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসেন। ডাক্তারকে দেখান। ডাক্তার যে অনুযায়ী চিকিৎসা দেন সেই অনুযায়ী রোগিরা চিকিৎসা নেন।’

ডিপিআরসি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জানালেন, রোগীদের চিকিৎসায় দেশীয় মেডিসিনের পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশি ওষুধও দেয়া হয়।

ডিপিআরসির ব্যবস্থাপকের দাবি, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে অস্ত্রোপচার ছাড়া উন্নত চিকিৎসার শতভাগ সাফল্যে মানুষের আস্থার জায়গা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিপিআরসির ব্যবস্থাপক হাবিবুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগি দেশ ও দেশের বাহিরে থেকে এসে থাকেন।’

রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক সাড়া মিললেও আধুনিক বিজ্ঞান কি বলছে এ চিকিৎসা নিয়ে তা প্রশ্ন রেখেছিলাম ডিপিআরসি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের কাছে।

ডিপিআরসির বাত-ব্যাথা, প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান বলেন, ‘যারা সার্জন তারাও আমাদের সাথে একমত হয়েছে। আর্লি এক্সারসাইজ থিমটা এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়েছে।’

নানাবিধ রোগের সব চিকিৎসা দেয়া সফিউল্যাহ্ প্রধান জানালেন, যুবক বয়সে এসব রোগ শরীরে বাসা বাধাঁর কারণ। আরো জানালেন এখানে সকল চিকিৎসা খরচে রয়েছে ডিপিআরসির স্বতন্ত্র নিয়ম।

শুধু তাই নয় ডিপিআরসি হাসপাতালে দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে রয়েছে সকল পরীক্ষায় বিশেষ মূল্য ছাড়। পাশাপাশি চিকিৎসা নেয়ার সকল সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা। অভিজ্ঞ রিহাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. সফিউল্যাহ্ প্রধানের তত্ত্বাবধানে ডিপিআরসি হাসপাতালটি ফিজিওথেরাপি সেন্টার, রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ছাড়াও বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখেন। রয়েছে আধুনিক ডায়াগনস্টিক ল্যাব, বাংলাদেশের একমাত্র হাসপাতাল যেখানে অত্যাধুনিক কাপিং থেরাপি করা হয়।

ইএ