চলতি বছর শহরের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে জেলা-উপজেলায়। তবে উদ্বেগের বিষয়- আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রাণ হারাচ্ছে অন্তত একজন।
গেল বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখে বাংলাদেশ। তখন ভয়াবহতা ছড়ানোর মূলে কাজ করে ডেঙ্গুর ডেন-টু ধরনটি। মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশের বেশি এই ধরনে আক্রান্ত হয়েছিল।
এবছরও ডেঙ্গুর ডেন-টু ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন বলেন, ‘আমি কুয়াকাটা থেকে এসে ভর্তি হয়েছি।’ আরেকজন বলেন, ‘আমরা ছেলে গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। আবার এবার হয়েছে। আমার পরিবার ৩ জনের এখনো ডেঙ্গু আছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে। একইসঙ্গে ডেন-টু এর পাশাপাশি আগের বিভিন্ন ধরনেও আক্রান্ত রোগী মিলছে। যা ছড়িয়ে গেলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘রোগীর অনুপাতে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু সংখ্যা সর্বোচ্চ। এইটা শতকরায় একজন মারা যাচ্ছে।’
চলতি বছর ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার মৌসুম এখনও অনেকটাই বাকি। শহরকেন্দ্রিক মশাবাহিত এই রোগটি এরই মধ্যে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ার আশঙ্কা গবেষকদের।
কীটতত্ববিদ কবিরুল বাসার বলেন, ‘ঢাকার চাইতে ঢাকার বাহিরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকার বাহিরের জেলাগুলোতে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বর্জ্য পরিষ্কার করা, পানি পরিষ্কার এইটা সাময়িক কাজ না। সারা বছরই পরিষ্কার করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।’
ডেঙ্গু রোগীদের অনেক ক্ষেত্রেই উপসর্গ প্রকাশ পায় না। কারও কারও মৃদু উপসর্গ প্রকাশ পেলেও বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ডেঙ্গু পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়িতে থাকলে বিপদ বাড়তে পারে। তাই মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু এমন একটা রোগ যেটা মাথার চুল থেকে পায়ের নক পর্যন্ত ইফেক্ট করতে পারে। লক্ষণ দেখা দিলে সরাসরি হাসপাতালে আসতে হবে আর এখান থেকে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।’
ডেঙ্গুর যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতির কথা জানালেন দেশের সর্ববৃহৎ ডিএনসিসি ডেডিকেটেড পরিচালক।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল এ কে এম জহিরুল হোসাইন খান বলেন, ‘মে মাস থেকে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল হাসপাতালে পর্যাপ্ত টেস্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিও পায় তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।’
গেল দু'দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তনের সাথে ডেঙ্গু প্রকোপের যোগসূত্র রয়েছে বলছেন গবেষকরা। যে কারণে সারাবছরই এডিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করার পরামর্শ।