দেশে এখন
0

ব্যাক্টেরিয়া প্রয়োগে এডিস মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব!

এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সিঙ্গাপুর। দেশটি মশক নিধনে এডিস ইজিপ্টাই মশাকে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া প্রয়োগ করে অক্ষতিকর মশায় রূপান্তরিত করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়। এতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এডিসের বংশবিস্তার। যা বাংলাদেশেও করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটা?

এশিয়া ছাড়াও লাতিন ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু সমস্যা দীর্ঘদিনের। কখনও কখনও যা ভয়াবহ রূপ নেয়। যদিও এসব দেশে মৃত্যু হয় কম মানুষেরই। তাহলে প্রশ্ন জাগে- মশক নিধনে কি এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে দেশগুলো?

পুরুষ মশা রক্ত না খেলেও স্ত্রী মশা ডিম পাড়ার আগে রক্ত পান করে। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে প্রথমে নিজে সংক্রমিত হয়ে ভাইরাস বহন হরে মশা। এর ৮ থেকে ১০ দিন পর যা মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে। এ মশার কামড়েই ছড়ায় ডেঙ্গু।

এশিয়ায় যেসব দেশে ডেঙ্গুর বেশি প্রকোপ রয়েছে , তার একটি সিঙ্গাপুর। কিন্তু, ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকে নিজেদের বের করে এনেছে দেশটি। আর এজন্য এডিস ইজিপ্টাই মশাকে অক্ষতিকর মশায় রূপান্তরিত করেছে দেশটির গবেষকরা। তারপর সেগুলো ছেড়ে দেয়া হয় প্রকৃতিতে। যার সুফল পেয়েছে দেশটি। এই পদ্ধতির প্রয়োগ কি বাংলাদেশেও সম্ভব নয়?

কীটতত্ববিদ অধ্যাপক য. কবিরুল বাশার বলেন, 'উলবাকিয়া একটি ব্যাক্টেরিয়া, এই ব্যাক্টেরিয়া কোনো একটি মশার ভেতরে দিয়ে দিলে পুরুষ মশা স্ত্রী মশার সাথে যখন মিলিত হবে, তখন ওই স্ত্রী মশা যে ডিম পারবে তা থেকে আর বাচ্চা হবে না। আবার স্ত্রী মশার দেহে যদি কোনো ভাইরাস আসে, সেই ভাইরাসটিও তার দেহে আর বাড়বে না।'

প্রায় ৬০ শতাংশ কীটপতঙ্গে প্রাকৃতিকভাবেই উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকে। তবে এডিস মশায় তা থাকে না। কীটপতঙ্গ থেকে তা সংগ্রহ করে এডিস মশার ডিমে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। এতে কোনো মশার ডেঙ্গুর ভাইরাস থাকলেও উলবাকিয়ার কারণে তা আর ছাড়তে পারে না।

বিজ্ঞান ভিত্তিক এ পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন মশার হ্যাচারি। যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি ক্ষতিকর নয় এমন মশা প্রজনন করা যায়। উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করছে আইসিডিডিআরবির গবেষকরা।

আইসিডিডিআরবি'র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ড. শফিউল আলম বলেন, 'এখন যে পদ্ধতিতে আমরা চলছি সেটা মূলত রাসায়নিক কীটনাশক নির্ভর। সেগুলোর কিছু আছে পূর্ণাঙ্গ মশা নিয়ন্ত্রণ করে। আবার কিছু আছে যা লার্ভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই গবেষণা হয়েছে। অনেক দেশে প্রয়োগ চলছে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে এটা হয়নি। আমরা এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছি।'

আবার পুরুষ মশা উলবাকিয়াযুক্ত হলে এবং স্ত্রী মশায় এটি না থাকলে তাদের ডিম থেকে লার্ভা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। হলেও, বড় হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হয় না। তবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়ায় এসব মশা কতটা টিকে থাকতে পারবে?

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, 'আমরা ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে উলবাকিয়া মশা ছাড়লাম। কিন্তু প্রকৃতিতে মশা এতো বেশি, দেখা যাচ্ছে আমরা যে পরিমাণটা ছেড়েছি কম। এর মধ্যে সেন্টমার্টিনে দিলে উলবাকিয়া দারুণভাবে কাজ করবে।'

গবেষকরা বলছেন, উলবাকিয়াযুক্ত মশার বিস্তার করা গেলে, কমতে থাকবে ক্ষতিকর মশার সংখ্যা। আর এতে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকবে না।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর