মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন একাই নাচাচ্ছেন গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে। ৭০টির বেশি দেশের ওপর সম্পূরক শুল্ক ধার্য করে অস্থির করে তোলেন বিশ্ববাজার। শুল্ক কার্যকরের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই স্থগিতাদেশ দেন তিনি। এতেই ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার।
বাংলাদেশসহ ৭০টির বেশি দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক আপাতত তিন মাসের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সময়ে আমদানি পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে। ট্রাম্পের দাবি, বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং বাণিজ্য ও শুল্কবাধা নিরসনে আলোচনার অনুরোধ জানানোয় আপাতত নির্দেশ স্থগিত করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে শুল্কারোপের বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অনেকের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। আমার ধারণা এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য খুবই ইতিবাচক ছিল। যারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়, তাদের আঘাত করার কোনো লক্ষ্য নেই যুক্তরাষ্ট্রের।'
তবে এখনও বরফ গলেনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কে। সবার জন্য শুল্ক স্থগিত করলেও চীনের ওপর কয়েক দফায় বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে নিয়ে গেছেন ট্রাম্প। জবাবে চীনও দুই দফায় মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ রূপ নিয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধে।
ট্রাম্পের স্থগিতাদেশের পর তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী মার্কিন শেয়ার বাজার। স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি ফাইভ হান্ড্রেড শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। যা ২০০৮ সালের পর রেকর্ড। ১২ শতাংশ উন্নতি নিয়ে ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা দিন পার করলো নাসদাক। এছাড়া ডাও জোন্সের শেয়ারও ছিল আকাশচুম্বী।
এদিকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শেয়ার বাজারেও গতি ফিরেছে। জাপানের শেয়ারদর বেড়েছে আট শতাংশের বেশি। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার বাজারও চাঙা। এদিকে চীনা স্টকগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই খুব একটা বাড়েনি চীনের শেয়ার দর।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে সাড়ে চার শতাংশের বেশি। যা শুল্ক কার্যকরে ২০২১ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের দামও বেড়েছে তিন শতাংশ। বেড়েছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের মূল্যও। আর বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাও তার আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। একদিনের মার্কিন ডলারের মান বেড়েছে ৪.৪৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান অস্থিরতার মধ্যে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেছেন বিনিয়োগকারীরা। তিন মাসের স্থগিতাদেশ বাজারকে স্থিতিশীল করলেও, মন্দার শঙ্কা থাকবে।
ব্যাংকরেটের আর্থিক বিশ্লেষক স্টিফেন কেটস বলেন, 'ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল স্বস্তির বিষয়। স্পষ্টতই আগামী তিন মাস নিশ্চিন্ত থাকবে সবাই। তবে আবারও এই হারে শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। এটি বিনিয়োগকারীদের মাথায় রাখতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনই ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে।'
এদিকে বৈশ্বিক মন্দা নিয়ে জেপি মর্গ্যানের পূর্ভাবাস ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশে আনা হয়েছে। তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে চলতি বছরেই বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে ধারণা সংস্থাটির।