স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

কয়েক ইঞ্চির স্ক্রিন কেড়ে নিচ্ছে শৈশব

খেলার মাঠ থেকে ঘর, তারপর কখন যেন মোবাইলের কয়েক ইঞ্চির স্ক্রিন কেড়ে নিয়েছে শৈশব। বিনোদনের আড়ালে শিশুদের আসক্তি তৈরি করছে মোবাইল গেম। নিজেদের অজান্তেই যেখানে কোমল শিশুদের হৃদয়-মস্তিষ্কে গেঁথে যাচ্ছে সহিংসতা। বদলে যাচ্ছে আচরণ, কমে আসছে লেখাপড়ার সময়।

আদনান, নাবা, রবিউল নামের তিন ভাই-বোন, মোবাইল গেম আসক্তির কারনে অকালেই ঝরে পড়বে না তো বগুড়ার ফুলতলা এলাকার এই কুসুম কলিরা। কোনোকিছুতেই যখন মোবাইলের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখা যায় না, সারাক্ষণ তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেক অভিভাবক।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, 'সারাক্ষণ মোবাইলে গেম খেলে। এতে চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেজাজও খিটখিটে হয়ে গেছে। ওদের কথাই আমার শুনতে হয়।'

মোবাইলে শুধু গেম নয়- সহজেই ইন্টারনেট আইকন চালু করে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিলস আর বিভিন্ন নিম্নমানের কন্টেন্ট শিশুদের ভাষা যেমন বদলে দিচ্ছে তেমনি তৈরি করছে নিম্নমানের রুচিবোধ।

অভিভাবকরা আরও জানান, রিলসগুলো থেকে শিশুরা একদিকে অকথ্য ভাষায় কিছু গালাগালি শিখে ফেলছে, আবার গুলি, অস্ত্র দিয়ে নানা ধরনের গেমিং খেলছে বাচ্চারা। এগুলো তারা ছোট বয়স থেকেই শিখে যাচ্ছে।'

যেকোনো উপায়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হবে। সেজন্য কামান বা গোলাবারুদ যা প্রয়োজন, তাই ব্যবহার করা হচ্ছে। গেমটির নাম কল অফ ডিউটি। এমনিভাবে গ্র্যান্ড থেফট অটো, ফাইভ নাইট অ্যাট ফ্রেডিজ এর মতো গেম চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আচরণ আর শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যেও।

হাসপাতাল, মেডিকেল বা ক্লিনিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে তাকালে দেখা যায় চোখের নানা জটিলতা নিয়ে আসছে ছোট ছোট শিশুরা। খেলার মাঠ ছেড়ে গৃহবন্দি হবার পর এসব শিশুদের জগৎ যখন কয়েক ইঞ্চিতে সীমাবদ্ধ হয়েছে, তখন সবার আগে যার প্রভাব পড়ছে দৃষ্টিশক্তির ওপর।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. পল্লব কুমার সেন বলেন, 'বাচ্চারা মোবাইলটা সাধারণত চোখের কাছে নেয়। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে। তখন চোখের ওপর তো একটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। আমাদের মোবাইল বা ল্যাপটপ যাই দেখি, তা আমাদের চোখের থেকে ৯০ সেন্টিমিটার দূরে রেখে দেখা উচিত।'

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. পরিতোষ কুমার ঘোষ বলেন, 'একই গেম বারবার খেলার ফলে সেগুলো রিপিটেডলি রান করে। এটাকে বলা হয় ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং। এটা যখন ব্রেনে ঢুকে যায়, তখন এগুলোই আমরা বাস্তবজীবনে করার চেষ্টা করি।'

শিক্ষাবিদ বজলুল করীম বাহার বলেন, 'গেমিংয়ের ফেজগুলো আছে, তা খুব ছোট ছোট। এগুলো মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। সেজন্য মোটিভেশনাল টাইপের গেমিং তৈরি করা উচিত।'

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রতিবেদন বলছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে ৫ বছরের বেশি বয়সী ৫২.৪৮ ভাগ এবং ৬৩.২১ ভাগ শহুরে শিশু মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। বিশ্বে মিলিয়ন-বিলিয়নে এখন হিসেব হচ্ছে গেমের বাজার। বাংলাদেশেও বড় হচ্ছে এ বাজার। বলা হচ্ছে, প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের এ মোবাইল গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে ২.৫ বিলিয়ন অ্যাকটিভ প্লেয়ার আছে যারা নিয়মিত নানা ধরনের মোবাইল গেমস খেলছে।

গেম তৈরির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা না থাকায় যার যার ইচ্ছেমতো গেম তৈরি করায় গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন সুরক্ষিত থাকছে না তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর