প্রবাস
দেশে এখন
0

প্রবাসীদের ৯০ শতাংশই প্রশিক্ষণ ছাড়া দেশ ছাড়ছে!

রেমিট্যান্সের জোগানদাতা প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মীই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ যাচ্ছেন। পরিসংখ্যান ব্যুরো'র জরিপ বলছে, মাত্র ১০ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো গেলে বাড়বে প্রবাসী আয়। তাই বিদেশগামী কর্মীদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে জোর দেয়ার তাগিদ তাদের।

বৈশ্বিক নানা সংকটেও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। যাদের শ্রম-ঘামের রোজগারে স্বস্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পালে যে সু-বাতাস লেগেছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সদ্য বিদায়ী জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের যোগান। একক মাস হিসেবে গেল মাসে ২৫৪ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার আসে প্রবাসীদের হাত ধরে। যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। কিন্তু এই অর্থের যোগানদাতা বিদেশগামী কর্মীরা কী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রবাসে পাড়ি দিচ্ছেন?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো'র আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩-এর তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মীই কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ যাচ্ছেন। কেননা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১০০টিরও বেশি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের বেশিরভাগই নানা সংকটে জর্জরিত।

এসব ট্রেনিং সেন্টারের কোনটির অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক। কোথাও প্রশিক্ষণার্থী থাকলেও নেই চাহিদা মাফিক সরঞ্জাম।

২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রবাসী অধ্যুষিত নরসিংদীর ট্রেনিং সেন্টার তেমনই একটি। বর্তমানে নিয়োগ জটিলতায় ভুগছে প্রশিক্ষক সংকটে। এর সঙ্গে রয়েছে ল্যাব ও শ্রেণিকক্ষের সংকটও। এতে বিদেশগামী অনেকেই পাচ্ছেন না যথাযথ প্রশিক্ষণ।

একজন প্রশিক্ষণার্থী বলেন, 'যেখানে ২০ জন বা ৩০ জনের ক্লাস হয় সেখানে ১০০ জনেরও একসাথে ক্লাস নেয়া হয়। ড্রাইভিংয়ের জন্য ট্রাক নেই। সেজন্য আমাদের ড্রাইভিং শেখাটা অনেক অসুবিধা হচ্ছে।'

মুন্সীগঞ্জের চাকচিক্যময় একটি সেন্টারে সরঞ্জাম থাকলেও নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী।

বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অভিবাসীদের মধ্যে মাত্র ১০.৪ শতাংশ বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে কর্ম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ৪৭.৬৬ শতাংশই দক্ষতা অর্জন করেন বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেন ৪০.৫৪ শতাংশ মানুষ। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০.৮৩ শতাংশ রংপুর বিভাগে আর সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ সিলেট বিভাগের।

এদিকে, বিদেশগামী কর্মীর সর্বোচ্চ ২০.০৫ শতাংশ নির্মাণ সম্পর্কিত কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। আর ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক ফিল্ডে ১৮.২১ শতাংশ এবং হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ১১.৯৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে কাজ করছেন।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথাগত প্রশিক্ষণগুলোর আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন জরুরি। আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে তাগিদ দেন তারা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, 'শুধু বইয়ের ভাষা শিখলে হবে না। আর এক মাস বা দুই মাসে এটা শেখা যায় না। আমাদের প্রবাসের জন্য যে ট্রেনিং সেন্টারগুলো আছে সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমগুলো আধুনিক নয়। প্রশিক্ষকগুলোও আধুনিকভাবে প্রশিক্ষিত না।'

বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব বিএমইটির। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে আপত্তি জানায় তারা।

যদিও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়নে আশ্বাস দিলেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, 'প্রশিক্ষণের যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন, তা অত্যন্ত পুরাতন। যে কারণে আমরা আলাপ-আলোচনা করে নতুন এই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে, প্রতিটি টিটিসিকে জানানো হয়েছে তাদের কী কী জিনিসের প্রয়োজন তা আমাদের জানানোর জন্য।'

দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে রিক্রুটিং এজেন্সিসহ সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

এসএস