সড়কের পানি ছাপিয়ে উঠে ফুটপাতে। তলিয়ে যায় দোকানপাট। পথচারীদের ভোগান্তি চরমে। ঢাকায় কোথাও আধঘণ্টা ঝুম বৃষ্টি হলেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে নগরজীবন।
কিন্তু কেন বৃষ্টি হলেই এমন জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীর বুকে? যে নালা বা সুয়ারেজ লাইন দিয়ে নামার কথা শহুরে বৃষ্টির পানি- সেগুলোর পরিস্থিতি কী? রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, যে পথ দিয়ে নামবে বৃষ্টির পানি- তার মুখে জমে আছে আবর্জনা, প্লাস্টিকসহ নানা কঠিন বর্জ্য। ড্রেনের প্রবেশপথ ছাড়াও ভিতরে একই ধরনের নোংরা জমে থাকায় স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না পানি। তাই বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক।
গবেষণা বলছে, রাজধানী ঢাকায় ছয় হাজার ১০০ টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে প্রতিদিন। যা নির্ধারিত স্থান বা ডাস্টবিনে না ফেলায় অনেকক্ষেত্রে এসে জমা হচ্ছে ড্রেনে। অচল করে দিচ্ছে নগরীর পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনাকে।
ঢাকার দুই সিটিতে ড্রেন লাইন রয়েছে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি। কিন্তু নগরবাসীর সচেতনতার অভাবে সেখানে বর্জ্যের স্তুপ জমা হওয়ায় বৃষ্টি হলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় পুরো শহরবাসীকে।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, 'আগে স্বল্প বৃষ্টিতে ৭০ ভাগ নিমজ্জিত হয়ে যেত। সেখান থেকে আমরা উত্তরণ করতে পেরেছি। প্রথম বছরেই আমরা ১৩৬টি স্থান চিহ্নিত করেছি, যেখানে ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতা হতো। এগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি।'
উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা ড্রেন পরিষ্কার করে যাচ্ছি। নগরবাসীকে বলবো পলিথিন, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্য ড্রেনে ফেলবেন না। এতে ড্রেনের মুখ আটকে যাচ্ছে। এতে বৃষ্টির পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হচ্ছে।'
আবর্জনায় আটকে আছে ড্রেনের পানি। ছবি: এখন টিভি
জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ ও আবাসিক প্রকল্প করায় বহু জলাধার হারিয়েছে মহানগরী ঢাকা। এতে বৃষ্টির পানি সহজে নামতে না পেরে জমে থাকছে সড়কেই। সাময়িক পরিকল্পনায় নগরবাসী কিছুটা নিস্তার পেলেও টেকসই সমাধানে চাই বড় কর্মপরিকল্পনা।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, 'প্রথমত খালগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে উদ্ধার করতে হবে। এরপর জলাধারের সাথে নদীর সংযোগ সৃষ্টি করে বৃষ্টির পানিকে নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।'
গেল বছর ৯০-১১০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যেতে পারে।