লাউ-চিংড়ির ঝোলটা করার কথা ছিল নিজের ঘরে বসেই। কিন্তু বাঁধভাঙ্গা পানি ভাসিয়ে নিয়েছে হামিদা বেগমের ঘরবাড়ি। তাই চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বসেই রান্না শুরু করেছেন তিনি। দুদিন ধরেই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া হয়নি পরিবারের কারোরই।
হালিমা বেগম বলেন, 'প্রচুর কষ্ট হচ্ছে রাত হলে চোখে ঘুম নেই কোথায় থাকবো, কোথায় যাবো।'
হামিদা বেগমের মতো এমন সমস্যায় রয়েছেন খুলনার উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। উপকূলীয়ের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। ভাসিয়ে নিয়েছে বসতভিটা। বাড়ির গবাদি পশুগুলোর জায়গা হয়েছে রাস্তায়।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ঘর-বাড়ি ভেসে গিয়েছে। খাবার খেতে পারছি না।'
দক্ষিণের উপকূলীয় জনপদ পাইকগাছা। ঝড়ের দিন গভীর রাতে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। দুইদিনে পানির তোড়ে বসতি হারিয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথেই আশপাশের ১২ থেকে ১৪ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নেমে পড়েছেন বাঁধ সংস্কারে। দ্রুত এই বাঁধ সংস্কার করতে না পারলে যেটুকু গ্রাম বেঁচে আছে তারও চিহ্ন থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের আরেকজন বলেন, 'বাঁধ তেমন একটা ভালো ছিল না। যেকেনো মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ার অবস্থা ছিল। সেটাই হয়েছে।'
আরেকজন বলেন, '৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে কোনোভাবে ঠিক না করতে পারি তাহলে যেটুকু গ্রাম আছে তাও ভেসে যাবে।'
বাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা না গেলেও গ্রামবাসী আর্থিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়াও সরকারি সাহায্যের জন্য দাবি জানান তারা।
খুলনা-২ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, 'সবগুলো জায়গায় পানির প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এখনো কাজ চলমান আছে।'
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমির ৫ হাজার ৫৭৫টি মাছের ঘের এবং ৩০৭ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৩০০টি পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।