সুন্দরবনের মধু: পাস নিয়ে আহরণে নামলেন মৌয়ালরা

সুন্দরবনের মধু: পাস নিয়ে আহরণে নামলেন মৌয়ালরা | এখন টিভি
0

সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। বন বিভাগ থেকে পাস নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছে মৌয়ালরা। চলতি মৌসুমে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জ থেকে দুই হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু ও ৭৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ৫৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

প্রতিবছর পহেলা এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মৌয়ালদের দেয়া হয় সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি। তবে এ বছর ঈদের কারণে আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে ৭ এপ্রিল।

আগামী দুই মাস সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে পারবেন মৌয়ালরা। এ জন্য সরকারকে দিতে হবে রাজস্ব। এক কুইন্টাল মধুর জন্য এক হাজার ৬০০ এবং মোমের জন্য মৌয়ালদের গুণতে হবে দুই হাজার ২০০ টাকা। মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে মধু আহরণের জন্য গেলেও মৌসুম শুরুর আগে অবৈধভাবে সুন্দরবন থেকে মধু চুরি হওয়ায় আশানুরূপ মধু না পাওয়ার শঙ্কায় তারা।

মৌয়ালদের মধ্যে একজন বলেন, 'অনেকে এসে আমাদের মধুগুলো সব কেটে ফেলছে। না হলে আমরা মধু পেতাম ভালো।'

সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মধু হয় খলিশা ফুল থেকে। বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া বাইন, গরান, কেওড়া ও মিক্স ফুলের মধু পাওয়া যায়। তবে পশ্চিম সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকায় অভয়ারণ্য হওয়ায় বিশাল সুন্দরবনের অল্প এলাকায় মধু আহরণ করার অনুমতি দেয়া হয়। এতে পর্যাপ্ত মধু পাওয়ায় পরিবারের ভরণপোষণ চালানো কঠিন হয় মৌয়ালদের।

মৌয়ালদের মধ্যে একজন বলেন, 'যদি বিক্রি হয় এক হাজার টাকা। তাহলে মহাজন দেয় ৮০০ টাকা। মধুটা যদি সরকার নিয়ে আমাদের ন্যায্যমূল্য দিতো তাহলে মরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।'

বন বিভাগ বলছে, অভয়ারণ্য এলাকায় বনজীবী প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলে হরিণ শিকারসহ নানা অপরাধের শঙ্কা রয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, 'যেসমস্ত এলাকায় আমাদের মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে যাবে ওই জায়গাগুলোতে যেসমস্ত ক্যাম্প এবং স্টেশন আছে এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের পুলিশ প্রশাসন যারা আছেন তাদের সতর্ক করেছি যেন তাদের (মৌয়ালদের) মধু আহরণ করতে কোনো সমস্যা না হয়।'

উপজেলা প্রশাসন বলছে, সুন্দরবনের মধুর সুনাম রক্ষায় এই অঞ্চলে সরকারিভাবে মধু সংগ্রহ, ল্যাবে পরীক্ষা ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনি খাতুন বলেন, 'এই এলাকায় মধু প্রসেসিংয়ের কোনো টেস্টিং ল্যাব করা হয়, তাহলে টেস্টিং ল্যাবের মাধ্যমে একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় থাকবে যে, এটা সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু। এবং যারা ভোক্তা তারাও কিন্তু প্রমাণিতভাবে এটা নিতে পারবে।'

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে চলতি মৌসুমে এক হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু ও ৪০০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা ৩২ লাখ টাকা। এছাড়া খুলনা রেঞ্জে এক হাজার কুইন্টাল মধু ও ৩৫০ কুইন্টাল মোম থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২২লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এসএস