ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পশু মোটাতাজাকরণে সৈয়দপুরের খামারগুলোতে বেড়েছে খড়ের চাহিদা। একই সঙ্গে বেড়েছে খড় কাটা মেশিনের চাহিদাও। খামারি থেকে দোকানি, সবখানেই ধুম পড়েছে খড় কাটার মেশিন কেনার। বিভিন্ন দোকানেও বিক্রি হচ্ছে কাটা খড়।
ঈদের আগে ও পরে এই মেশিনের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই মেশিন বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সৈয়দপুরের কারিগররা। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আশেপাশের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়েও যাচ্ছে এই মেশিন।
মেশিন বানানোর একজন কারিগর বলেন, 'সিজনে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কেজি খড় উৎপাদন করা যায় দুটি মেশিন দিয়ে। কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। তার আগে থেকেই রাত দিন কাজ করে মেশিন স্টক করি আমরা। এখন ছোট মেশিনের চাহিদা বেশি আছে।'
আকার, বৈদ্যুতিক মোটর, ব্লেড অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে এসব মেশিনের দাম। বৈদ্যুতিক মোটরসহ একেকটি বড় মেশিন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আর ছোট মেশিন বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। এই মৌসুমে অন্তত ৩০০টি মেশিন বিক্রি হবে বলে আশা মালিক সমিতির। সেই হিসাবে প্রায় তিন কোটি টাকার খড় কাটার মেশিন বিক্রি নিয়ে আশাবাদী তারা।
মেশিনের মাধ্যমে খড় কাটা হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি
একজন কারখানা মালিক বলেন, 'সবকিছুর দাম বেড়েছে। কারিগরদের মজুরি বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়াও বেড়ে গেছে। সবমিলে এখন আমাদের খরচ বেশি। মেশিন বিক্রি করে খুব একটা লাভ হয় না এখন।'
যদিও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সংকট তৈরি হয়েছে এর কাঁচামাল লোহা ও ইস্পাতের। তাই কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। বিকল্প কোনো উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের ব্যবস্থা করে দাম কমানোর আহ্বান ব্যবসায়ী নেতাদের।
সৈয়দপুর জেলা শাখার বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, 'এখন এতবেশি লোডশেডিং হচ্ছে যে ঠিকমতো উৎপাদন করতে পারছি না। এই চালিকা শক্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাঁচামালের ওপর ভর্তুকি দিয়ে মূল্য যেন কম রাখার ব্যবস্থা করা হয়।'
উত্তরবঙ্গে ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু সৈয়দপুরে যতগুলো ব্যবসা হয় তার একটা বড় জায়গা দখল করে আছে এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। সারাবছর বড় বড় মেশিনের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ সাপ্লাই দিলেও কোরবানির সময় চাহিদা বাড়ে খড় কাটা মেশিনের। ছোট বড় নানা ধরনের এই মেশিনগুলো তৈরি করতে দিনরাত এক করে ফেলেন শ্রমিকরা। আর এটাই এ মৌসুমে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখে।