বছরের এই সময়টায় বেড়ে যায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর। বেশকিছু এলাকায় প্রায় সব বাড়িতেই দেখা যায় দিনরাতের ব্যস্ততা।
নাটোরের গোয়ালদিঘী-কৃষ্ণপুর গ্রামের নামই হয়ে গেছে মুড়ির গ্রাম। সবুজে ঘেরা এ গ্রামের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস হাতেভাজা মুড়ি। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে চাহিদা যথারীতি বেশি থাকে।
কারিগররা জানান, বছরের এ সময়টাতে উৎপাদন বাড়াতে দরকার হয় বাড়তি কারিগরের। তাই পরিবারের লোকজন ছাড়াও মৌসুমি শ্রমিকরা যোগ দেন কাজে। প্রতিদিন এই গ্রামে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ মণ মুড়ি উৎপাদন হয়।
মুড়ি কারিগররা বলেন, 'রোজার মাস এলে আমার ব্যবসা ভালো হয়। মুড়ি কেনা বেচা ভালো হয়।'
আরেকজন বলেন, 'আগের চেয়ে এখন খরচ বেশি। লবণের দাম বেশি, খড়ির দাম বেশি, মজুরি দাম বেশি। সরকারের কাছে আবেদন আমাদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দিলে আমরা এই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারি।'
জেলার কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া, দৌলতপুর, লুহুরিয়া, সিংহটিয়াসহ অন্তত ১০ গ্রামেও একই চিত্র। ধান সংগ্রহ থেকে চাল তৈরি এবং মুড়ি ভেজে তা ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের প্রতিটি ধাপে বেশ কর্মব্যস্ত সময় কাটে তাদের। এসব এলাকায় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি হয়।
হাতেভাজা মুড়ি ভেজালমুক্ত বলে জানান কারিগররা। পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে। ধানসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও মুড়ির দাম না বাড়ায় তেমন লাভ হয় না বলে দাবি তাদের। কম লাভে হতাশার কথা জানিয়েছেন পাইকাররাও।
মুড়ির কারিগরদের আরেকজন বলেন, 'মুড়ি যা হয় তাতে সংসার চালাতে কষ্ট। হাতে ভাজা মুড়ির দাম কমে যাচ্ছে। এইভাবে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। '
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, 'মুড়ি ব্যবসা আগে ভালো ছিল। এখন নাই। এখন যা ইনকাম তার থেকে খরচ বেশি। দাম একই কোনটায় দুই টাকা লাভ হয় কোনটায় কম হয়। ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়।'
মেশিনের তুলনায় কম উৎপাদন, নির্দিষ্ট জাতের ধান না পাওয়া, মূলধন সংকটে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে না পারাসহ নানা সংকটে শিল্পটি ধরে রাখা কঠিন বলে জানান উৎপাদনকারীরা। সমস্যা নিরসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন জেলা বিসিক সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. তহিদুল হক। বলেন, 'আর্থিকভাবে অসচ্ছলতায় ভোগার কারণে যদি মুড়ি তৈরি করতে না পারে তাহলে বিসিকের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা যারা বিসিকের কর্মকর্তা আছি সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আর্থিক সমস্যা দুর করা যায় সেটার ব্যবস্থা করে থাকবো।'
উৎপাদন হওয়া এলাকার আশপাশেই শুধু নয়। রাজধানীসহ অন্য বড় শহরের ক্রেতাদের কাছেও বেশ কদর হাতে ভাজা মুড়ির। বিদ্যমান সমস্যা ও সরবরাহ জটিলতা কাটাতে পারলে সারাবছরই নিরাপদ এ খাদ্যদ্রব্যটি সরবরাহ সম্ভব বলে মনে করেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।