বেইলি রোডে মধ্যদিনের ঝকমকে আলো, তার মধ্যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পোড়া জঞ্জালের বিষম কালো। সেদিকে পথচারীর ভীত চোখ, ৪৬ জনের প্রাণ হারানোর নিদারুণ এক শোক।
এমন শোকে কিংবা দায়িত্বে রাষ্ট্রের টনক নড়েছে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার নামীদামী রেস্তোরাঁর অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা। রেস্তোরাঁগুলোতে নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযানে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে।
আর এসবের ভয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লাপাত্তা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর বেইলি রোড, খিলগাঁও, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট কাউকে না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণ জানাও সম্ভব হয়নি। তবে অধিকাংশ স্থানে রেস্টুরেন্টের অগ্নিনিরাপত্তা সনদ না থাকা, ভবনের সরু সিঁড়ি ও অগ্নি সুরক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব দেখা গেছে। যারা খোলা রাখছেন সেখানেও ক্রেতার সমাগম কম।
ক্রেতারা বলেন, ‘বেইলি রোডের দুর্ঘটনার পর ভীষণ ভয় লাগে। অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন বুঝতে পারি, আমাদেরও সচেতন হতে হবে। আসলে আমরা আগেভাগে সচেতন হই না ‘
সামনে রমজান, ইফতারি আর সেহেরি মিলিয়ে জমজমাট ব্যবসার সময়। এমন মুহূর্তে রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় ক্ষতির আশঙ্কায় এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের পর জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আর সব জায়গায় ক্রেতার সংখ্যা একবারেই কমে গেছে। আর ক্রেতারাও ভয়ের মধ্যে আছেন। তারপরও আমরা গেস্টদের জন্য রেস্টুরেন্ট খোলা রাখছি।’
এক যুগের ব্যবধানে দেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে এখন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেখানে অন্তত ২০ লাখ মানুষ কর্মরত আছেন। তাই রেস্তোরাঁ বন্ধ না করে নিয়মের আওতায় আনার দাবি দোকান মালিক সমিতির।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়া সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এটির সমাধান খুঁজতে হবে। আর এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় বিল্ডিং ও ফায়ার কোড বাস্তবায়নের আহ্বান অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া দরকার সমন্বিত আইন প্রয়োগ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মোঃ শাহিদউল্লাহ বলেন, ‘কেন নিরাপত্তা বিধান হয়নি, কারা কারা এটির জন্য দায়ী তাদেরকে আগে চিহ্নিত করতে হবে। আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুই সিটি কর্পোরেশন একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আগুনের ঘটনায় বছরে গড়ে ৩৬৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়, পাশাপাশি শতাধিকের বেশি প্রাণহানি হয়। অগ্নি নিরাপত্তায় সরকার এখনই কঠোর না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে।