দেশে এখন
0

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মরণে গ্রন্থাগার এখন জরাজীর্ণ

ফেনীর দাগনভূঞায় ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় 'ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। তবে ঝকঝকে একতলা ভবনের ১১টি আলমারিতে হাজার তিনেক বই ঠাসা থাকলেও নেই কোন পাঠক। ভাষার মাস ছাড়া গ্রন্থাগারটি খোলাও হয় না নিয়মিত।

সারাবছরে সবমিলিয়ে কয়েকজন দর্শনার্থী মিললেও খাতা-কলমে একজন পাঠকেরও হদিস মেলেনি ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে। পাওয়া যায়নি পাঠক রেজিষ্টার খাতাও। শহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন চোখে পড়েনি।

২০০৮ সালে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের বাড়ির অদূরে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। তবে ১৬ বছরেও সেখানে বাড়ানো যায়নি পাঠকের উপস্থিতি। জেলা পরিষদ থেকে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হলেও পাঠক না থাকায় অলস সময় কাটান তারাও।

ভেঙে গেছে বই রাখার আলমিরাও। টেবিলে, মেঝেতে পড়ে আছে মূল্যবান বই। ভঙ্গুর অবস্থা আসবাবপত্রেরও।

দর্শনার্থীরা বলেন, 'ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধা সবধরণের বই এখানে আছে। আমার এখানে পাঠকের সংখ্যা খুব কম।'

আরেকজন বলেন, ভাষা শহীদ সালামের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এই জাদুঘরটা করা হয়েছে। এই জাদুঘরটা বর্তমানে অনেক জরাজীর্ণ হয়ে গেছে, ভিতরে বেশি বইও নেই, আসবাবপত্র ভেঙ্গে গিয়েছে।'

আরেক দর্শনার্থী বলেন, 'আমার মনে হয় অত্র এলাকার যে বিদ্যালয়গুলো আছে তাদের শিক্ষার্থীদের এখানে যুক্ত করা যায় তাহলে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।'

এডিপির অর্থায়নে ১২ শতক জমিতে সাড়ে ৬৩ লাখ টাকায় জাদুঘরটি স্থাপন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণে নেই ব্যবস্থা। গ্রন্থাগারটির অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবদুস সালামের পরিবারের সদস্যরাও।

শহীদ সালামের ভাই আবদুল করিম বলেন, 'এখানে যে জাদুঘর আসলে জাদুঘর না এইটা একটা বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে, এরপরে বহুদিন পর্যন্ত আমরা পরিচালনা করেছি কিন্তু বয়সের কারণে এখন আমি পারিনা'

এলাকাবাসী বলেন, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ১৯৫২ সালে ভাইয়ে ভাষার জন্য জীবন দিছে। তিনি আমাদের এলাকার গর্ব।'

পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়াতে নদীর পাড়ে একটি পার্ক তৈরির পাশাপাশি গ্রন্থাগারটি মেরামত করার কথা বলছেন স্থানীয় প্রশাসন।

ফেনীর দাগনভূঞায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, 'সালাম নগরীকে জনগণের সমাগমের জন্য  আমরা একটা পৌরসভার পার্ক করতে চেয়েছিলাম, এখানে ফেনির ছোট নদীতে যাতে করে নৌকা দিয়ে মানুষ ঘুরতে পারে এবং একটা পিকনিক স্পট করতে চেয়েছিলাম। এইটা আসলে এখনো করা সম্ভব হয়নি। এটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সালাম জাদুঘরে  আসা যাওয়ার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে, নদী ভাঙন রোধ করা হয়েছে।'

ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার তপন বলেন, 'এ বছরই প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং এই প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছে জেলা পরিষদ থেকে।'

১৯২৫ সালে শহীদ আব্দুস সালাম দাগনভূঁঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর পর ২০০০ সালের মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয় তাকে।

ইএ