দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ১৯১৩ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। যাত্রী ও ফ্লাইট বাড়লেও তাল মিলিয়ে সক্ষমতা বাড়েনি এই বিমানবন্দরের। এখনও যাত্রী ধারণক্ষমতার চেয়ে ছোট টার্মিনাল ভবন।
আর একটি মাত্র টার্মিনালে চলছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের কার্যক্রম। ফলে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট থাকলে যাত্রী সংকুলানে সমস্যা হয়। লাগেজ বেল্টের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। ইমিগ্রেশনের জন্য চেক ইন কাউন্টারও অপ্রতুল। মাত্র দুটি বোর্ডিং ব্রিজ থাকায় অধিকাংশ সময় যাত্রীদের টার্মিনাল ভবন থেকে হেঁটেই বিমানে উঠতে হয়।
যাত্রীরা বলেন, 'বোর্ডিং ব্রিজ এবং টার্মিনাল গেট এখানে দরকার। লাগেজগুলো যেন আমরা আরও দ্রুত পেয়ে যাই। কাতার এয়ারলাইন্সকে সরাসরি চট্টগ্রামে আসার সুযোগ দেয়া হলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়।'
সামরিক ও বেসামরিক মিলে গত বছরে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে ৩০ হাজার ৫৩৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। এক বছরে আর্ন্তজাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুট মিলে প্রায় এক হাজার ফ্লাইট বেড়েছে।
ফ্লাইট বাড়লেও বিমান মেরামতের জন্য এখানে কোন হ্যাঙ্গার নেই। প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে না থাকায় বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে সময় বেশি লাগে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার মধ্যে কেবল ভারতের কলকাতায় সীমাবদ্ধ এই বিমানবন্দরের আকাশ সেবার পরিসর।
ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটররা বলছেন, আরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী করতে শাহ আমানত বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর বলেন, 'আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবন, রানওয়ে সম্প্রসারণ, পাঁচ তারকা হোটেল যদি করা হয় তাহলে বিদেশি ফ্লাইটগুলো নামার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকবে না।'
বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কিংবা ইউরোপ আমেরিকায় সরাসরি বা কোন কানেক্টিং ফ্লাইট না থাকায় এ অঞ্চলের যাত্রী ও প্রবাসীদের রাজধানীতে ছুটতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যাত্রী চাহিদা জরিপ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপুর্ণ গন্তব্যে যাত্রীদের ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয়ার আহবান।
একটি মাত্র টার্মিনালেই চলছে যাত্রীসেবা
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, 'বিনিয়োগকারীরা এখানের ইকোনমিক জোন বা আনোয়ারা ইপিজেড-এ আসবে। এটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টকে ঢেলে সাজাতে হবে।'
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ড. আবুল মোমেন বলেন, 'যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং শ্রমশক্তির যোগাযোগ বেড়েছে সেসব জায়গায় এটি বাড়াতে হবে বলে আমি মনে করি।'
অবকাঠামো সীমাবদ্ধতা আছে স্বীকার করে বিমানবন্দরের পরিচালক বলছেন এরই মধ্যে উড়োজাহাজের পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি এবং নতুন আরেকটি বোডিং ব্রিজ হচ্ছে।
পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে একটা সার্ভে টিম গঠন করে দিয়েছি এবং একটা কনসালটেশন টিম জার্মানি থেকে এসেছে। তারা একটা মাস্টারপ্ল্যান করছে। যার স্থায়িত্বকাল ২০৭০ সাল পর্যন্ত হবে।'
২০২৩ সালে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন ১৬ লাখ যাত্রী । এর আগের বছর যা ছিলো ১৪ লাখ ৫৫ হাজার। এ বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি রুট ও ভারতের কলকাতায় ফ্লাইট চলাচল করছে।