৯ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা মসনদ দমকা হাওয়ায় ভেঙ্গে পড়লো কাচের দেয়ালের মতো। বলছি সদ্য পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কথা।
আবেগঘন ঘোষণায় সরকার প্রধানের পাশাপাশি দলীয় প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর কথা জানান ৫৩ বছর বয়সী এই নেতা। বলেন, দলের অন্তর্কোন্দলের কারণে আগামী নির্বাচনে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থী নন তিনি।
পদত্যাগের কারণ পরিষ্কার করলেও ট্রুডো অধ্যায় সমাপ্তির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এনডিটিভি, দ্য ইকোনমিক টাইমস ও টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতো গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নরেন্দ্র মোদির কারিশমার কথা তুলে ধরা হচ্ছে।
২০২৩ সালের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে খালিস্তানপন্থি নেতা হারদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। সেসময় অটোয়া জানায়, নয়াদিল্লির মদদেই সম্পন্ন হয়েছে কিলিং মিশন। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় কূটনৈতিক টানাপড়েন। গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ভারতকে চাপে ফেলতে গিয়ে কানাডার অভ্যন্তরীণ সংকটকে ধামাচাপা দিচ্ছিলো ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি। উল্টো ভারতের কূটনৈতিক চাপে দেশের ভেতর ও বাইরে সমর্থন হারান ট্রুডো।
এদিকে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রুডোর জন্য। ক্ষমতাগ্রহণের পর কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ ও দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার ঘোষণা দেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর বিপক্ষে জোরালো অবস্থান তৈরি করতে না পারায় সমর্থক ও বিরোধীদের তোপের মুখে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন ট্রুডো, এমন খবরও প্রচার করছে অনেক গণমাধ্যম।
তবে, গণমাধ্যম যাই বলুক, জাস্টিন ট্রুডোর জন্য অর্থনৈতিক ও অভিবাসী সংকটের মতো অভ্যন্তরীণ ইস্যুই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
কুইন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যাথি ব্রুক বলেন, ‘ নয় বছর হয়ে গেছে। জনগণ সরকারের ওপর বিরক্ত হওয়ায় পরিবর্তন চাচ্ছিলো। কিন্তু তিনি কখনো সাধারণ মানুষের সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করেননি। খাদ্যের মূল্য, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, অভিবাসী সংকট ও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তার পদক্ষেপ উপযুক্ত ছিল না।’
আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে পার্লামেন্ট অধিবেশন। এর মধ্যে সরকার ও দল পরিচালনায় নতুন নেতা খুঁজবে লিবারেল পার্টি। তবে জোট সরকারের সদস্য দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় লিবারেলদের পতন প্রায় নিশ্চিত। সংবিধান অনুযায়ী অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনমত জরিপ বলছে, ১০ বছর পর সরকার গঠন করতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন দলটির নেতা পিয়ের পলিভ।