দেশে এখন
0

সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান আর নেই

বিশিষ্ট শিল্পপতি, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত‍্যাগ করেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ‍্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন ফজলুর রহমান।

বাদ আসর গেন্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে। মৃত‍্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, বাণিজ্যমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, এফবিসিসিআই সভাপতি, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানও ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

১৯৭২ সালে ফজলুর রহমানের হাত ধরে সিটি গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। দিনটি ছিল ৬ ফেব্রুয়ারি। ঢাকার গেন্ডারিয়ায় তীর সরিষার তেল উৎপাদনের মধ‍্য দিয়ে ফজলুর রহমান শিল্প উদ‍্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরই মাধ‍্যমে কার্যক্রম শুরু হয় সিটি গ্রুপের।

সেই উদ‍্যোগ সফল হলে দিন দিন সিটি গ্রুপের অগ্রযাত্রা আরও বেশি বিস্তৃত হতে থাকে। উৎপাদন, শিল্প উদ‍্যোগ আর বাণিজ‍্যে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ।

বতর্মানে দেশের অন‍্যতম শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ অব কোম্পানিজ সিটি গ্রুপ। এই গ্রুপের অধীনে ৪০ টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে কাজ করছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এই শিল্পগোষ্ঠীর পণ‍্য রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে।

পাঁচ দশকে ফজলুর রহমান গ্রুপের ব্যবসা প্রসারিত করে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়, দেশীয় খাদ্য শিল্পকে নিয়ে গেছেন গতানুগতিক ব্যবসা গণ্ডির বাইরে। এছাড়াও প্যাকেজিং, শক্তি, ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা এবং শিল্প প্রকল্পে (সিটি ইকোনমিক জোন) কোম্পানির ব্যবসার প্রসার ঘটান। ফজলুর রহমানের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং পরিশ্রমের ফলে দেশের বৃহত্তম এফএমসিজি ব্র্যান্ড ‘তীর’ তৈরি হয়েছে। তীর কেবল দেশেই পুরস্কার পায়নি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। তিনি পুরান ঢাকার জনগণের জন্য দেশের অন্যতম আধুনিক হাসপাতাল আজগর আলী হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন।

উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের কারণে ফজলুর রহমান পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন কয়েকবার। তিনি ডিএইচএল-ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘বিজনেস পার্সন অফ দ্য ইয়ার ২০০৫’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ‘সেরা করদাতা’ হন ফজলুর রহমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বীকৃত একজন বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) তিনি। ফজলুর রহমান বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এবং বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৪২ টাকার পুঁজি থেকে আজ ২৫ হাজারের বেশি মানুষের জীবিকা সিটি গ্রুপ। তার পেছনে একজন ফজলুর রহমানের অনেক ত্যাগ ও ঘাম ঝরানোর গল্প আছে। গেন্ডারিয়ায় যখন মারওয়ারিরা শান শওকতে ঘানি পরিচালনা করত তখন 'পাকিস্তানিরা পারলে আমরা কেন পারবো না' এমন দূরদর্শী ভাবনার কম পুঁজির বিনা অভিজ্ঞতার এক প্রতিবাদী ব্যবসায়ী তিনি।

শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েও সচেতন ছিলেন শিল্পপতি ফজলুর রহমান। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবায় গেন্ডারিয়ায় করেছেন আধুনিক হাসপাতাল। আছে মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটও।

ফজলুর রহমানের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৬ মে।

এসএসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর