মে মাসেই ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি, শঙ্কায় ছাত্রসংগঠনগুলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন | ছবি: এখন টিভি
0

আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থী, শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা। অপরদিকে ডাকসু নিয়ে আপত্তি না থাকলেও সংস্কারবিহীন নির্বাচনের বিপক্ষে ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন।

ডাকসুর দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘোষিত রোডম্যাপে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়নি। এটিকে তারা দেখছেন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডাকসু পেছানোর পাঁয়তারা হিসেবে।

দ্রুত ডাকসু চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে ভোটের আয়োজন করা হলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আগামী মে মাসের মধ্যেই নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন একটি পোলের আয়োজন করলেও তার ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এ মাসের পর ঈদুল আযহার ছুটি পড়বে। এবং তার পরে আমরা আশঙ্কা করছি যে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক দেশের যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সেটি হতে পারে।’

ছাত্রশিবির ও অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় গড়ে ওঠা নতুন ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মত সংগঠনগুলোর বক্তব্যেও উঠে আসলো ডাকসু নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা। শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শঙ্কা ছাত্রদলকে নিয়ে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু রোডম্যাপ ঘোষণা করে তফসিলও ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছিল। যেদিন পূর্ব নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণা করার কথা, সেদিন আমরা দেখেছি যে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এবং ফলশ্রুতিতে তফসিলটা ঘোষণা করা যায়নি। যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে, একই জিনিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে হচ্ছে কি না? সেটা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক বলেন, ‘এই টাইমলাইনের মধ্যে আসলে তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হয়। কিন্তু আবার যদি পেছানো বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় এটা খুবই দুঃখজনক হবে। আমরা চাচ্ছি এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনটা গঠন হবে এবং অ্যাটলিস্ট তফসিলের ডেটটা ঘোষণা হবে।'

ছাত্রদল আর ছাত্র ইউনিয়ন দ্রুত ডাকসু চাইলেও বেশি মনোযোগ সংস্কার নিয়ে। ডাকসু নির্বাচনের কার্যকর পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে ছাত্রদল। আর সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠনটির। ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, সংস্কার না করে নির্বাচনে গেলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বেসিক সংস্কারগুলো না করেই নির্বাচনের দিকে আগাচ্ছে। প্রোপার তো অনেক বড় শব্দ। প্রোপার পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে পুরো গঠনতন্ত্রের অনেককিছুই পরিবর্তন করে ছাত্রদের হাতে দিয়ে দেয়া উচিত। সেটা উনারা কেন পারবেন না, তা আমরা জানি না।’

ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘নিজেদের কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাপ প্রয়োগ করার জন্য তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারটি বিগত সময়ে ছাত্রলীগ যেভাবে ব্যবহার করতো সেই একইভাবে ব্যবহার করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া যে এরকম ব্যাপারটি আমরা মনে করি না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া এরকম যেটি আমরা ধারণ করি, আমরা মনে করি সেটা হচ্ছে, একটি কার্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।’

ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই ডাকসুর দিকে এগোচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানালেন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ। বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে মে মাসের শেষ সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচন করাই তাদের লক্ষ্য।

সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চার শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে যে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নাই। ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে যে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। মতামত বোজার জন্য আমরা এটা করেছি। এবং সেই মতামত বোঝার কারণেই আমি অনেক দৃঢ়ভাবে বলতে পারছি যে ডাকসু নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। এবং আমাদের প্রায়োরিটি হলো মে মাসের শেষ সপ্তাহ।’

সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঈদের আগেই ডাকসু নির্বাচন দিয়ে ছাত্র সংসদের অচলাবস্থা কাটাবে এমনটাই মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

এসএস