গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর আলোকে প্রার্থীর মৃত্যু সংক্রান্ত আইনি জটিলতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুন:
একনজরে: প্রার্থীর মৃত্যু ও নির্বাচনি আইন
- আইন: আরপিও (RPO) ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ১৭(১)।
- শর্ত: প্রার্থীকে অবশ্যই 'বৈধ' বা চূড়ান্ত মনোনীত হতে হবে।
- ঘোষণা: রিটার্নিং কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক নির্বাচন বাতিলের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।
- ব্যতিক্রম: যদি প্রার্থী চূড়ান্ত বৈধ না হন অথবা বিকল্প প্রার্থী থাকে, তবে নির্বাচন স্থগিত হয় না।
আরপিও আইন ১৭(১) কী বলে?
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ১৭-এর ১ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর এবং ভোটগ্রহণের আগে কোনো বৈধভাবে মনোনীত (Validly Nominated) প্রার্থী মৃত্যুবরণ করেন, তবে সংশ্লিষ্ট আসনের নির্বাচনি কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল বা স্থগিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:
আইনের মূল পয়েন্টগুলো হলো:
প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়া: প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশন কর্তৃক 'বৈধ প্রার্থী' হিসেবে স্বীকৃত হতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা: প্রার্থীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই আসনের নির্বাচনি কার্যক্রম বাতিলের ঘোষণা দেবেন।
নতুন তফসিল: সংশ্লিষ্ট আসনে নতুন করে নির্বাচনের জন্য পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হবে।
অপরিবর্তিত প্রার্থী: যারা আগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ছিল, তাদের নতুন করে ফরম জমা বা জামানত দিতে হবে না। শুধুমাত্র নতুন প্রার্থীরা সেখানে অংশ নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার মৃত্যু ও বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বর্তমান নির্বাচনি তফসিলে কোনো প্রভাব পড়বে না। এর পেছনে দুটি প্রধান আইনি ও কৌশলগত কারণ রয়েছে:
১. বৈধ প্রার্থীর মর্যাদা: খালেদা জিয়ার নামে বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনীর তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলেও কমিশন এখনো তাকে 'চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থী' হিসেবে ঘোষণা করেনি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের (Scrutiny) প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় প্রার্থীর মৃত্যু হলে ওই আসন স্থগিত করার প্রয়োজন পড়ে না।
২. বিকল্প প্রার্থী (Dummy Candidate): বিএনপি কৌশলগতভাবে খালেদা জিয়ার প্রতিটি আসনেই 'বিকল্প প্রার্থী' রেখেছিল। ফলে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল বা তার অনুপস্থিতিতেও ওই আসনগুলোতে বিএনপির দলীয় প্রার্থী থাকছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য যে, ২০২৫ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে আরপিও আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধিত বিধিতে 'ইলেকশন' শব্দের পরিবর্তে 'পোলিং' বা ভোটগ্রহণ শব্দটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রার্থীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৭(১) ধারার মূল চেতনা অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আইনি জটিলতাগুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রার্থীর মৃত্যু ও নির্বাচনি আইন নিয়ে প্রশ্নোত্তর-FAQ
প্রশ্ন: নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে কি ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি তিনি একজন 'বৈধভাবে মনোনীত' (Validly Nominated) প্রার্থী হন এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর মারা যান, তবে ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করা হয়।
প্রশ্ন: আইনের কোন ধারায় এই স্থগিতের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO), ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ১৭(১) অনুযায়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে নির্বাচনি কার্যক্রম বাতিলের বিধান রয়েছে।
প্রশ্ন: প্রার্থীর মৃত্যুতে কি সারা দেশের নির্বাচন স্থগিত হয়?
উত্তর: না, শুধুমাত্র যে আসনে ওই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, সেই সুনির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন বাতিল হয়। বাকি সব আসনে ভোট যথাসময়ে চলবে।
প্রশ্ন: মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগে প্রার্থী মারা গেলে কি হবে?
উত্তর: যদি বৈধ প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হওয়ার আগেই কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হয়, তবে সাধারণত নির্বাচন স্থগিত হয় না। কারণ তিনি তখনও আইনের ভাষায় 'বৈধ প্রার্থী' নন।
প্রশ্ন: কোনো আসনে নির্বাচন বাতিল হলে নতুন করে কি করতে হয়?
উত্তর: ওই আসনে নতুন করে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনরায় নতুন তফসিল ঘোষণা করে।
প্রশ্ন: নতুন তফসিলে আগের প্রার্থীদের কি আবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে? উত্তর: না, যারা আগের তফসিলে বৈধ প্রার্থী ছিলেন, তাদের নতুন করে মনোনয়নপত্র বা জামানত জমা দিতে হয় না।
প্রশ্ন: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে কি তার ৩টি আসনের নির্বাচন স্থগিত হবে?
উত্তর: না, কারণ তিনি এখনও 'বৈধ প্রার্থী' হিসেবে চূড়ান্ত হননি এবং ওই আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী (Dummy Candidate) রয়েছে।
প্রশ্ন: 'বৈধ প্রার্থী' এবং 'মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থী'র মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: মনোনয়নপত্র জমার পর তা যাচাই-বাছাইয়ে টিকে গেলে এবং প্রত্যাহারের সময় পার হলে তিনি 'বৈধ বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী' হন। এর আগে তিনি কেবল একজন আবেদনকারী।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক দলের 'বিকল্প প্রার্থী' থাকলে কি ভোট স্থগিত হয়?
উত্তর: যদি মূল প্রার্থীর মৃত্যুর পর একই দলের অন্য কোনো বৈধ প্রার্থী বিদ্যমান থাকে, তবে নির্বাচন স্থগিত করার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রশ্ন: ভোটগ্রহণের কত দিন আগে প্রার্থী মারা গেলে নির্বাচন বাতিল হয়?
উত্তর: মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু হলে নির্বাচন বাতিল হবে।
প্রশ্ন: নির্বাচন বাতিলের ঘোষণা কে দেন?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচনি কার্যক্রম বাতিলের ঘোষণা দেন।
প্রশ্ন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হলেও কি একই নিয়ম প্রযোজ্য?
উত্তর: হ্যাঁ, তিনি যদি বৈধ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়ে থাকেন, তবে তার মৃত্যুতেও ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত হবে।
প্রশ্ন: নতুন তফসিলে কি নতুন কোনো প্রার্থী অংশ নিতে পারেন?
উত্তর: হ্যাঁ, নতুন তফসিলে নতুন যে কেউ যোগ্যতাসাপেক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
প্রশ্ন: প্রার্থীর মৃত্যুর পর পুনরায় ভোট কত দিনের মধ্যে হতে হয়?
উত্তর: ইসি সুবিধাজনক সময়ে নতুন তফসিল দেয়, সাধারণত স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই এই ভোট সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন: প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থী মারা গেলে কি ব্যালট পেপার পরিবর্তন হয়?
উত্তর: যেহেতু নতুন তফসিলে নতুন প্রার্থী আসার সুযোগ থাকে, তাই পুনরায় প্রতীক বরাদ্দ এবং প্রয়োজনে নতুন ব্যালট পেপার ছাপানো হয়।





