‘ফ্যাক্টরি বন্ধ, শেয়ার মার্কেটে ধস, ব্যাংক কলাপস—এসব অস্বাভাবিক ব্যাপার চলতে পারে না’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান | ছবি: এখন টিভি
1

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বাস্থ্য সুবিধা না পাওয়া, একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়া, শেয়ার বাজারে ধস নামা, বিভিন্ন ব্যাংকের শাটডাউনের মতো অস্বাভাবিক ব্যাপার দেশে ঘটছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন তারেক রহমান। আজ (সোমবার, ৮ ডিসেম্বর) বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে জানান, দেশের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক নয়। এমন অস্বাভাবিকভাবে দেশকে চলতে দেয়া যাবে না।

তারেক রহমান বলেন, ‘পত্রিকার পাতা খুললে আমরা দেখেছি, এর মধ্যে বহু ষড়যন্ত্র চলছে সত্যটা যেন প্রকাশ না পায়। কিন্তু পেটের ক্ষুধা কিন্তু বাস্তবের কথা বলে, খালি পকেট বাস্তব কথা বলে। পত্রিকার পাতায় আমরা দেখি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের বিভিন্ন সমস্যা। মিল ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেশি হোক, বিদেশি হোক, বিনিয়োগকারীরা বলছে আমরা বিনিয়োগ করবো না, করতে চাই না। হাসপাতালগুলোতে ঠিকভাবে চিকিৎসার সুবিধা নেই। অনেক জায়গায় স্কুল-কলেজগুলোতে সঠিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। রাস্তায় বের হলে ছিনতাই তো আছেই কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের হাত থেকে সুস্থ শরীরে ফিরে আসা যাবে কি না সেটারও কিন্তু গ্যারান্টি নেই। খুব সম্ভব গতবছরও বাংলাদেশের সাত হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনাতেই মারা গিয়েছে। এটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, এত সড়ক দুর্ঘটনা কেন হবে বাংলাদেশে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুবিধায় ঠিকমতো কেন মিনিমাম বেসিক সুবিধাটাও পাব না? এটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এত মিল ফ্যাক্টরি কেন ধাপাধাপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এভাবে শেয়ার মার্কেট কেন ক্র্যাশ ডাউন করছে? এটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। ব্যাংকের পর ব্যাংক শাটডাউন করছে, ক্লোজডাউন করছে, কলাপস করছে। এ অস্বাভাবিক ব্যাপার তো এভাবে চলতে পারে না। এ অস্বাভাবিক ব্যাপার চলতে দেয়া যেতে পারে না। এ অস্বাভাবিক ব্যাপার যদি পরিবর্তন করে দেশকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, নেই এবং নেই।’

আরও পড়ুন:

তারেক রহমান বলেন, ‘একটা ছোট বাচ্চাকে ক্লাস ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, সিক্সের বাচ্চাকে প্র্যাকটিস কিন্তু আমরা ইজিলি করাতে পারবো। বই পড়তে হবে, নো ফেসবুক, নো সোশ্যাল মিডিয়া, যাও আধা ঘণ্টা থাকো। কিন্তু বই পড়তে হবে, খেলতে হবে, মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। গাছের যত্ন নিতে হবে, পশুপাখির যত্ন নিতে হবে, বড়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারও সঙ্গে ঝগড়া করা অ্যাভয়েড করতে হবে, বড়দের সঙ্গে বেয়াদবি করা অ্যাভয়েড করতে হবে, মুখে মুখে তর্ক করা অ্যাভোয়েড করতে হবে। যুক্তি-তর্ক দিয়ে কথা বলতে হবে। এ জিনিসগুলো কিন্তু আমরা প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের শিখাতে পারবো, তাদের শেখানোটা অনেক সহজ হবে। তাদের যদি এ ভালো জিনিসগুলো শিখাতে যাই তাহলে আরেকটি জিনিস আমাদের দরকার, সেটি হচ্ছে আমরাদের শিক্ষক। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।’

তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করছি না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নরমালি মাস্টার্স পাশ করেছে, ডিগ্রি পাশ করেছে, কোথাও চাকরি পাচ্ছে না। এরকম লোক প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে টিচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলের টিচার কারা হবে? প্রাইমারি স্কুলের টিচার তো তারাই হবে, যারা ভালো স্টুডেন্ট। কারণ ভালো স্টুডেন্ট যদি টিচার হয়, সে তার স্টুডেন্টদের ভালো জিনিস শেখাতে পারবো। যারা শিক্ষক আছেন প্রাইমারি স্কুলের তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। ট্রেনিং দিয়ে তাদের বেটার টিচার করতে চাই। যারা টিচার আছেন তাদের নিশ্চয়ই বিভিন্নরকম কোয়ালিটি আছে। আমরা সুযোগ দিতে চাই, তারা যেন তাদের কোয়ালিটিগুলোতে বেশি প্র্যাকটিস করতে পারে। তারা যেন ভালো টিচার হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা ছয় মাস এক বছরে হবে না। কিন্তু আমরা সবাই মিলে যদি ঠিক করি যে, আমরা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবো। যেটা আমাদের আগামী দিনে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে সহজ করবে। আমরা তাহলে সেভাবেই সেটিকে গড়ে তুলবো।’

আরও পড়ুন:

আগামী নির্বাচনে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে খাল খননের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন উনি একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। তখন এ নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলেছিল। কী ছিল প্রকল্পটি? খাল খনন প্রকল্প। কিছুই না, খাল কাটো, খাল কাটতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার ইনশাআল্লাহ দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে আমরা এ খাল খননের কাজ আবার শুরু করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন করবো? এর অনেকগুলো কারণ আছে। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন খাল খনন করেছিলেন, খাল খনন করার মাধ্যমে উনি একদিকে যেমন বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, আরেকদিকে ঠিক একইভাবে ফসলের সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। তার ফলে বাংলাদেশের যেখানে একটি ফসল হতো, সেখানে দুটি ফসল হওয়া শুরু করলো। শুধু পানি সরবরাহ ঠিকভাবে পাওয়ার জন্য, সেচ সুবিধার জন্য।’

এসএস